রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩, আহত ৩০
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়ায় ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিনের বেলায় রুশ বাহিনীর এই হামলায় অন্তত ১৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির টেলিগ্রাম পেজে পোস্ট করা গ্রাফিক ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাস্তায় আহত রক্তাক্ত বেসামরিক নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জরুরি পরিষেবার কর্মীরা।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, “শহরে বিমান বোমা হামলার চেয়ে নৃশংস আর কিছু নেই, সাধারণ বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনেও এই হামলা চালানো হয়েছে।”
হামলার কয়েক মিনিট আগে, জাপোরিঝিয়ার গভর্নর ইভান ফেডোরভ দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিধ্বংসী গ্লাইড বোমা হামলার হুমকি সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছিলেন।
গভর্নর জানান, রাশিয়ান সৈন্যরা দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে জাপোরিঝিয়ায় গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। শহরের আবাসিক ভবনগুলোতে কমপক্ষে দুটি বোমা আঘাত হেনেছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাপোরিঝিয়ায় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন।
এর আগে, বুধবার সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, “যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইচ্ছুক দেশগুলোকে ইউক্রেনকে তার ভবিষ্যত প্রতিরক্ষা সম্পর্কে আশ্বাস দেওয়া উচিত।” কিয়েভের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, সামরিক শক্তির মাধ্যমে রাশিয়াকে ঠেকানো না হলে যেকোনো যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির চেষ্টা ক্রেমলিনকে কেবল পুনরায় শক্তি বৃদ্ধি ও আক্রমণ করার সময় দেবে।
জেলেনস্কি বলেন, “সত্যি বলতে, আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের অধিকার আছে... বিশ্বে শান্তির লক্ষ্যে কাজ করা দেশগুলোর কাছ থেকে বড় নিরাপত্তা গ্যারান্টি দাবি করার।”
জেলেনস্কি কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের দিনের মন্তব্যের জবাবে বলেন, “ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে তিনি রাশিয়ার বিরোধিতা বুঝতে পেরেছেন।”
জেলেনস্কি উল্লেখ করেন, “ন্যাটো সামরিক জোটে ইউক্রেনের তাৎক্ষণিকভাবে যোগদানের পথে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এর আগে মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানায়, তারা রাশিয়ার গভীরে একটি জ্বালানি ডিপোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামলার ফলে ওই ডিপোতে আগুন ধরে যায়।
রাশিয়ান কর্মকর্তারা ওই এলাকায় একটি বড় ড্রোন হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ আগুন নেভানোর জন্য একটি জরুরি কমান্ড সেন্টার স্থাপন করেছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, তাদের ড্রোন রাশিয়ার সারাতোভ অঞ্চলের এঙ্গেলসের কাছে একটি জ্বালানি ডিপোতে আঘাত হেনেছে, যা ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) পূর্বে অবস্থিত। ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ব্যবহৃত রুশ যুদ্ধবিমান ওই ডিপো থেকে জ্বালানি নিত।
ইউক্রেন দেশীয়ভাবে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের অস্ত্রাগার তৈরি করছে, যা যুদ্ধের সামনের সারির অনেক গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম। রাশিয়ার গভীরে ইউক্রেনের হামলার ঘটনা ক্রেমলিনকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
জেলেনস্কি গত বছর বলেছিলেন, তার দেশ এমন অস্ত্র তৈরি করেছে যা ৭০০ কিলোমিটার (৪০০ মাইল) দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। কিছু ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা ১,০০০ কিলোমিটার (৬০০ মাইল) এরও বেশি দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ