ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৩ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২১ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৫:২৯, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আদেশটি হলো নাগরিকত্ব সংক্রান্ত। 

বিগত প্রায় ১৫০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ পেয়ে আসছেন। কিন্তু সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই অধিকারকে বাতিল করার জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির ফলে অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দিলে শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। তবে বাবা-মায়ের কেউ আমেরিকান নাগরিক হলে সন্তান জন্মের পরই মার্কিন নাগরিক বলে স্বীকৃতি পাবে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প যদিও জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা সম্বলিত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, কিন্তু এর বিস্তারিত তথ্য এখনো অস্পষ্ট।

জন্মগত নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী থেকে উদ্ভূত, যেখানে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’।

ট্রাম্প যদিও এই রীতি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা ব্যাপক আইনি বাধার সম্মুখীন হবে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও অন্যান্য সংস্থাগুলো এরইমধ্যে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

‘জন্মগত নাগরিকত্ব’ কী?

মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর প্রথম বাক্যটি ‘জন্মগত নাগরিকত্ব’ নীতিটি প্রতিষ্ঠা করে: ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্বপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তি এবং এর এখতিয়ারের অধীন যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা যে রাজ্যে বাস করেন সেই রাজ্যের নাগরিক।’

অভিবাসন বিরোধীদের মতে, “এই নীতি অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের দিকে টেনে আনে। গর্ভবতী নারীদের সন্তান জন্মদানের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করতে উৎসাহিত করে। এটি এমন একটি আইন, যাকে অবমাননাকরভাবে ‘জন্ম পর্যটন’ বা ‘নোঙ্গর শিশুর জন্ম’ বলা হয়।

এর শুরু কীভাবে হয়েছিল?

যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৮৬৮ সালে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়। ১৩তম সংশোধনীতে ১৮৬৫ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করা হয়। ১৪তম সংশোধনীতে মুক্ত, আমেরিকান বংশোদ্ভূত সাবেক দাসদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির নিষ্পত্তি করা হয়।

১৮৫৭ সালে ড্রেড স্কট বনাম স্যান্ডফোর্ডের মতো মামলাগুলোর রায়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনই মার্কিন নাগরিক হতে পারবে না। ১৪তম সংশোধনী এটিকে অগ্রাহ্য করে।

১৮৯৮ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট নিশ্চিত করে, জন্মগত নাগরিকত্ব অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এরিকা লি লিখেছেন, “চীনা অভিবাসীদের সন্তান ওং কিম আর্কের মামলার রায়ে নিশ্চিত করা হয় জাতি বা পিতামাতার অভিবাসন অবস্থা নির্বিশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তি নাগরিকত্বের দ্বারা প্রদত্ত সব অধিকারের অধিকারী। আদালত তখন থেকে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেনি।”

২৪ বছর বয়সী ওং চীনা অভিবাসীদের সন্তান ছিলেন, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু চীন সফর থেকে ফিরে আসার পর তাকে পুনরায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওং সফলভাবে আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, যেহেতু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই তার বাবা-মায়ের অভিবাসন অবস্থা ১৪তম সংশোধনীর প্রয়োগকে প্রভাবিত করে না।

ট্রাম্প কি এটি বাতিল করতে পারেন?

বেশিরভাগ আইন বিশেষজ্ঞ একমত যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মগত নাগরিকত্বের অবসান করতে পারবেন না।

মার্কিন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলের অধ্যাপক সাইকৃষ্ণ প্রকাশ বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এমন কিছু করছেন যা অনেক মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবে, তবে শেষ পর্যন্ত এটি আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটি এমন কিছু নয় যা তিনি (ট্রাম্প) নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”

সাইকৃষ্ণ প্রকাশের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় সংস্থাগুলোকে নাগরিকত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য আরো সংকীর্ণভাবে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু এটি নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে এমন যে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের সূত্রপাত করবে।

এর ফলে দীর্ঘ আদালতের লড়াই শেষ পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে শেষ হতে পারে।

সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট উভয়ের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট এবং যুক্তরাষ্ট্রের তিন-চতুর্থাংশ রাজ্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

ঢাকা/ফিরোজ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়