মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬০০

মিয়ানমারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছে ৫ হাজার ১৭ জন। এখনও ১৬০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশটির রাজ্য প্রশাসনিক কাউন্সিল জানিয়েছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
গত ২৮ মার্চ, ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প মিয়ানমারের সাগাইং শহরসহ আশপাশের গ্রামীণ এলাকা ধ্বংস করে দেয়। ভূমিকম্পের পর সাগাইং শহরের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শহরের ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ভূমিকম্পে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চাপা পড়ে রয়েছে বহু মানুষের লাশ। শহরজুড়ে মৃত্যুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবকিছু ধ্বংসের পর দৃশ্যমান কেবল ধ্বংসস্তূপ।
মিয়ানমারের রাজ্য প্রশাসনিক কাউন্সিল জানিয়েছে, নিখোঁজদের অনুসন্ধানে উদ্ধারকারী দলগুলো এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিনহুয়া নিউজের তথ্যানুসারে, জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে বিপর্যস্ত সাগাইং অঞ্চলে মানবিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছে। সামরিক সরকারের অনুমোদন না থাকায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান তেমন অগ্রসর হতে পারেনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, জান্তা সরকার ভূমিকম্প-কবলিত এলাকায় সাহায্য সরবরাহ সীমিত করছে, যেখানে সম্প্রদায়গুলো সেনা শাসনকে সমর্থন করেনি।
২০২১ সালে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নির্বাচিত বেসামরিক এনইউজি সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে সামরিক বাহিনী মিয়ানমার পরিচালনা করতে লড়াই করছে।
জাতিসংঘ বলছে, অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ ৩০ লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে এবং জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। এ অবস্থায় ২৮ মার্চের ভূমিকম্পের ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।
মিয়ানমার নাউ-এর মতে, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তরা অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের জন্য স্থানীয় অলাভজনক জরুরি প্রতিক্রিয়া দলের ওপর নির্ভর করছেন।
সাগাইংয়েই কমপক্ষে ৬৯৩ জন মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)।
ভারী যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের ধীর গতিতে সাড়া দেওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হওয়ায় নিহতদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
মিয়ানমার নাউ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন বাসিন্দা বলেছেন, “উদ্ধার মিশন শুধুমাত্র কায়িক শ্রম দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। কারণ ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য তেমন কোনো ভারী যন্ত্রপাতি নেই। ফলস্বরুপ, অনেক মানুষ অপ্রেয়োজনীয়ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন।”
মিয়ানমার নাউ-এর মতে, স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দলগুলোকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান তদারকির জন্য জান্তা অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ঠিকানার মতো বিস্তারিত তথ্য জমা দিয়ে সামরিক সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।
ঢাকা/ফিরোজ