বাংলাদেশে অসুস্থ বাবাকে দেখতে যেতে না পেরে আত্মহত্যা পশ্চিমবঙ্গের নারীর
কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম
বাবা অসুস্থ। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারেননি বাংলাদেশে। দিন কয়েক আগে ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু তখনও সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি। এমনকি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটিও করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও যেতে পারেন নি। এই নিয়ে মনের মধ্যে ছিল একরাশ ক্ষোভ, অভিমান, হতাশা। আর তা থেকেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ওই গৃহবধূ। এই দাবি করেছেন তার শ্বাশুড়ি।
৩২ বছর বয়সী ওই নারীর নাম কাকলি সরকার। হৃদয় বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ইতোমধ্যে স্থানীয় টিটাগড় থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিন দশক আগে কাকলির জন্ম হয় বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ এলাকায়। ২০১০ সাল নাগাদ বাংলাদেশেই সবুজ সরকারের সাথে বিয়ে হয় কাকলির। ২০১৬ সালে কাকলি-সবুজের পাশাপাশি তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি এবং ননদ প্রত্যেকেই ভারতে চলে আসেন। সেই থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন ৪৬/২২ সি কে. জি. স্কুল রোড এলাকায় বসবাস করছিলেন দুই সন্তানের জননী কাকলি।
শাশুড়ি শিবানী সরকার বলেন, “আমার বউমা (ছেলের বউ) বাপের বাড়ি যেতে চেয়েছিল। কারণ বাংলাদেশে তার বাবা অসুস্থ, ভাইরের বিয়ে হয়। কিন্তু ওদেশে গণ্ডগোলের কারণে বউমা পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেনি। তারপরেও আমি বৌমাকে বলেছিলাম যদি কোনোভাবে সম্ভব হয় যেতে পারে। কিন্তু এই অশান্ত পরিবেশের মধ্যে ছেলেই-বা কিভাবে নিয়ে যাবে? যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বৌমাকে বাংলাদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু বৌমার কিছুতেই এখানে মন টিকছিল না, বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে উঠেছিল।”
মৃত্যুর আগে একটি সুইসাইড নোটও লিখে যান কাকলি। যেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন তিনি।
তার শ্বাশুড়ির বক্তব্য অনুযায়ী, কাকলি লিখেছেন, “আমার কিছু ভালো লাগে না। মা-বাবাকে দেখার জন্য আমার মন আকুল হয়ে উঠেছিল। আমার বাংলাদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।”
শুধু তাই নয় এনআরসি নিয়েও আতঙ্কে ছিলেন মৃত ওই নারী।
এই ঘটনায় স্থানীয় টিটাগড় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
শুক্রবার ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু জিনিস পাওয়া গেছে।
সুচরিতা/শাহেদ