ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘নদীর প্রস্থ কমিয়ে নিয়মিত ড্রেজিং করবো’

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১০ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘নদীর প্রস্থ কমিয়ে নিয়মিত ড্রেজিং করবো’

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিরাজমান সংকট, এর কারণ ও সমাধানের উপায় কী হতে পারে- এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সরকারের নতুন কিছু পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু।

রফিকুল ইসলাম মন্টু: আপনার দৃষ্টিতে পশ্চিম উপকূলে বেড়িবাঁধে মূল সমস্যা কী?

এ কে এম এনামুল হক শামীম: বাংলাদেশ নদীমাতৃক ভাটির দেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, চায়নায় যে বৃষ্টি হয়, তার পানি আমাদের দিকে চলে আসে। ফলে আমাদের ওপর চাপ পড়ে। পলিমাটির পাড় ভেঙে যায়। বাঁধগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা পাড় শক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছি না কেন? আসলে আমরা কাজ করছি। একদিনে তো সব কাজ হবে না। আমরা বড় প্রকল্প নিচ্ছি। কিছু দাতা দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আশাবাদী, প্রকল্পগুলো হবে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে একইসঙ্গে উপকূলের মানুষ সুরক্ষিত থাকবে এবং ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য অর্জিত হবে।

রফিকুল ইসলাম মন্টু: সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে চান?

এ কে এম এনামুল হক: আমরা চাই বড় নদীগুলোকে ছোট করে ফেলতে। ১০-১২ কিলোমিটার প্রশস্ত নদীকে আমরা ৫-৭ কিলোমিটারে নিয়ে আসবো। নদীর ওই অংশটুকু আমরা নিয়মিত ড্রেজিং করবো। মাটিগুলো নদীর পাড়ে ফেলা হবে। পুনরায় খনন করে ওটাকে আমরা ভরাট করে দেব। এটা কৃষি জমি হিসাবে ব্যবহৃত হবে। শুধু তাই নয়, বন্যার সময় যাতে পানি নেমে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা থাকবে। নদীর তীরের এই ভূমিতে আমরা ঘরবাড়ি করতে দেব না। বর্ষায় এখানে পানি উঠবে এবং পরে নেমে যাবে। এসব জায়গায় ঘরবাড়ি তৈরি করলে, পানি বাড়লে সব ভেসে যাবে। তখন আপনারা লিখবেন সব ভেসে গেছে- তা হবে না। বেশিরভাগ মানুষ নদীর পাড়ে খালি জায়গা পেয়ে ঘর তৈরি করে। কেউ কেউ একাধিক ঘর করে। এটা তো হবেই। কেননা আমাদের ছোট জায়গা। অনেক লোক।

রফিকুল ইসলাম মন্টু: পশ্চিম উপকূলের জন্য কী প্রকল্প হচ্ছে?

এ কে এম এনামুল হক: তিনটি প্রকল্প তৈরি হয়েছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৯৯৭ কোটি, ৯৬০ কোটি এবং ২০০০ কোটি টাকা। আরও একটা প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০০ কোটি টাকা। এগুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে। সেখানে পাস হতে সময় লাগে। বাস্তবায়ন করতেও সময় লাগে। আমাদের তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি কী? এখন কোন পর্যায়ে আছে?

এ কে এম এনামুল হক:  আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্প জমা পড়ে। একটু সময় লাগে। তবে এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্প অনুমোদন হবে বলে আশা করা যায়। আমরা সাতক্ষীরার প্রকল্প অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছি। সচিবকে তাগাদা দিয়েছি, যাতে আম্পান এলাকার প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার তালিকায় থাকে। তবে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের কাজগুলো চলছে। এখন যে কাজ হচ্ছে তাতে ৫২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে যুক্ত করেছি। রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত করেছি। স্থানীয় এমপিকে যুক্ত করেছি। স্থানীয় এমপির নিজের স্বার্থেই তাকে ভালো কাজ করতে হবে।

আসলে কাজগুলো করতে সময় লাগে। টাকা দিয়ে দিলে তো হবে না। কাজটা করতে তো হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি। আন্তরিকভাবে শুরু করেছি। চুরি যাতে না হয়, সে দিকে আমাদের নজর আছে। অনেকে বলে থাকেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাকা পানির নিচে যায়। তখন আমি বলি, হ্যাঁ, পানির নিচ থেকে কাজ উপরে উঠাতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই। জিও ব্যাগ ফেলে পানির নিচ থেকে উপরের দিকে উঠাতে হয়।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ বিক্রি হওয়ার অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

এ কে এম এনামুল হক: অভিযোগটি খুবই গুরুতর। কাজ বিক্রির অভিযোগ আমার মাথায় আছে। আমি বলে দিয়েছি কোনো ঠিকাদার কাজ বিক্রি করতে পারবে না। যদি কেউ কাজ বিক্রি করে তাহলে পরবর্তী সময়ে তাকে কাজ দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : চিংড়ি চাষ কি বাঁধ নাজুক করছে?

এ কে এম এনামুল হক:  বাঁধের দু’পাশে পানি থাকায় বাঁধ নাজুক হয়ে পড়ছে। চিংড়ির ঘেরগুলো করা হয়েছে বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে। আমরা বিষয়টি এবার দেখে এসেছি। আমরা একটি চিঠি তৈরি করেছি। ডিসিদের চিঠি দেব। চিঠিতে আমরা বলেছি, বাঁধ থেকে কমপক্ষে ৩০০ মিটার দূরে ঘের করতে হবে। ঘেরের পানি বাঁধের ক্ষতি করে। বাঁধ দুর্বল হয়ে যায়। বাঁধের ভেতরে, বাঁধের কাছে কোনো জলাশয় রাখা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : দাবি উঠেছে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারকে দেওয়া হোক। আপনি কী বলেন?

এ কে এম এনামুল হক: স্থানীয় সরকার এমনিতেই বিশাল এক মন্ত্রণালয়। তাদের অনেক কাজ করতে হয়। অনেক স্থানে তারা বাঁধের ওপরেই রাস্তা বানিয়ে দেয়। কিন্তু বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের সেই এক্সপার্টিজ কিন্তু স্থানীয় সরকারের নেই। তাদের কাজ ভিন্ন প্রকৃতির। তাছাড়া এখন যেসব কাজ তাদের করতে হয়, সেটাই তো তারা সামলাতে পারে না। তবে আমাদের কোনো সমস্যা নেই; তারা পারলে করবে।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা হচ্ছে?

এ কে এম এনামুল হক:  আপনি জনগণকে জিজ্ঞেস করে দেখেন, ফণীর পরে আমি এলাকায় গিয়ে জনগণের সামনে বলে আসার তিন মাস পরেই প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আম্পানের পরে আমি আবার গিয়েছি। জনগণকে বলে এসেছি, প্রকল্প তৈরি হয়েছে বাস্তবায়িত হবে। আপনাদের কথা দিয়ে গিয়েছিলাম। এবং স্থানীয় জনগণ বুঝতে পেরেছে, তাদের অনেকে বলেছে, হ্যাঁ, তিনি যেটা কথা দিয়ে গেছেন, সেটা হচ্ছে। আমি যেখানে যে কথা দিয়ে আসি, আমি সে কাজ করি। এই দশ বছরে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। এত টাকা ব্যয়ে আমরা প্রকল্প নেওয়ার সাহস করছি। জনগণের সামনে গিয়ে বলতে পারছি আমরা কাজ করবো। দশ বছর আগে তো সাহসই ছিল না। কেননা আর্থিকভাবে আমরা সেভাবে স্বাবলম্বী ছিলাম না। যে প্রকল্পগুলোর কথা বললাম, এগুলো বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরার অবস্থা অনেক পরিবর্তন হবে।

ঢাকা/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়