ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

সবসময় নিজেদের মৌলিক গল্প বলতে চাই : মেহেদী হক

স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৩:১৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সবসময় নিজেদের মৌলিক গল্প বলতে চাই : মেহেদী হক

মেহেদী হক। জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট। ২২ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি পেশাগতভাবে কার্টুন আঁকছেন। পরিচালনা করছেন ‘ঢাকা কমিকস’ নামে একটি কমিকস প্রকাশনা। সাইফাই, হরর, সাইকোলজিক্যাল, ফান থেকে শুরু করে মেটাফিকশন, উইয়ার্ড ফিকশন- নানান কিছু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠকের কাছে দ্রুত পরিচিতি পেয়েছে। এখানেই থেমে নেই মেহেদী হকের ভাবনা। তিনি বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি

২০১৩ সালে ঢাকা কমিকস-এর যাত্রা শুরু। এরপর ১০ বছর কেটে গেছে। করোনাকাল মোকাবিলা করেছেন। সব মিলিয়ে পুরো জার্নিটা কেমন ছিল?

ধন্যবাদ। বলতে দ্বিধা নেই, সব মিলিয়ে জার্নিটা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। যেহেতু আমরা শুরু করার আগে কমিকস-এর মার্কেট ছিল না, তাই যেতে যতে পথ তৈরি করতে হয়েছে। যে কোনো বইয়ের দোকানে বা পাঠককে বারবার বোঝাতে হয়েছে কমিকস কী। তবে এটাও বলতে হবে, দুই বাংলার পাঠকদের ভালোবাসা যখন আবার বুঝতে পারি তখন সব কষ্ট ভুলে আরো সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা পেয়ে যাই। 

আরো পড়ুন:

ছবি বা কার্টুন নিজেই সার্বজনীন ভাষা। বাকি থাকে লেখা অনুবাদ করা এবং বিশ্ববাজারে বই বিক্রি করা। আপনারা তো পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় বাংলা কমিকস পৌঁছে দিতে চান। এ পথে কত দূর এগিয়েছেন?

আপনি ঠিক বলেছেন। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কমিকস পৌঁছে দেওয়ার পথে আমরা খুব বেশি এগিয়েছি এমন দাবি করবো না। আপাতত আমরা শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে কমিকস প্রিয় পাঠক সমাজের কাছে পৌঁছেছি- এমন বলা যায়। পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বেশ বড়ো একদল অনুরক্ত পাঠক শ্রেণি আছেন। এবারেও কলকাতা কমিকস কার্নিভ্যালে ঢাকা কমিকস টপ সেলার ছিল। আর এর বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে বাংলা ভাষাভাষীরা আছেন, তাদের কাছে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের ডিজিটাল কমিকস-এর মাধ্যমে পৌঁছেছি অনেকটা। সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিকস নিয়ে মাস্টার্স করার সুবাদে সেখানকার কমিকস কমিউনিটির সঙ্গে আমাদের ভালো একটা যোগাযোগ হয়েছে। অচিরেই আমাদের কিছু কমিকস অনুবাদ করে সেখানে কমিকস কনভেনশনগুলোতে যাব- এমন কথা চলছে। আসলে পৃথিবীতে আমাদের গল্প পড়ার অনেক পাঠক আছেন, আমাদের এখন ভালো কাজ করে যেতে হবে আর ভালো অনুবাদ করতে হবে। 

বাংলাদেশে কমিকস-এর মূল পাঠক কারা বলে মনে করেন?

মূলত ১৪ থেকে ২৫ এর ছেলেরা, এবং বেশিরভাগই শহুরে। আমরা এই বলয় থেকে বের হতে ফোকাস করছি মেয়ে পাঠকদের ওপর। একইসঙ্গে আমাদের প্রোডাকশন ডিজাইনে সুলভ ম্যাটেরিয়াল এনে বইয়ের মূল্য আরো কমিয়ে তা সারা দেশে সহজলভ্য করতে চলেছি। এর প্রথম ধাপ হলো ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতেই আমরা একটা ম্যাগাজিন ফরম্যাটে কমিকস সংকলন আনতে যাচ্ছি। এতে তরুণ কমিকস আঁকিয়ে ও লিখিয়েরাও তাদের গল্প বলার একটা সুযোগ পাবে। 

বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে কমিকস-এর উপস্থিতি থাকা না-থাকা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে কমিকস কিন্তু সবসময়ই ছিল, অনেক আগে থেকেই স্ট্রিপ কমিকস আমাদের পত্রিকায় ছিল। যেমন ‘ইত্তেফাক’-এ প্রতিদিন বের হতো টারজান। বা ‘প্রথম আলো’তে ন্যান্সি, আর দেশি ডেইলি স্ট্রিপের মধ্যে ‘বেসিক আলী’। সমস্যা হলো পত্রিকা চাইলে বড় কমিকস প্রিন্টের জায়গা দিতে পারে না, সেখানে স্ট্রিপ আকারে ছোট প্যানেলে কমিকস করতে হয়। আর আমাদের দেশে পত্রিকায় ডেইলি স্ট্রিপ আঁকার মতো কমিকস আঁকিয়ের সংকট আছে। এদিকে যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা তরুণ স্ট্রিপ আঁকিয়েদের কাজ করতে দেখছি, তখন আমাদের পত্রিকার আর সেই আগের রমরমা আবহটা নেই। তাই তরুণেরা বরং সোশ্যাল মিডিয়াতেই কাজ করতে বেশি আগ্রহী। 

এবার বইমেলায় ঢাকা কমিকস থেকে নতুন কী আসছে?

সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার কমিকস সংকলন আসছে- ‘প্রতিবাস্তব : স্বপ্ন ও স্মৃতি’। এখানে ১৬ জন তরুণ কমিকস আঁকিয়ের কিছুটা পরীক্ষামূলক কাজ আছে। প্রতি বছরই আমরা বাংলা কমিকস নিয়ে এ রকম পরীক্ষামূলক কাজের একটা সংকলন করি। এর সাড়া বেশ ভালো। এ ছাড়া আমার আধিভৌতিক একটা সিরিজ আছে ‘নিহিলিন ক্লাব’। সেটা থেকে আসছে ‘অবলোপী’ নামে একটা গ্রাফিক নভেল। আসছে মেয়েদের কমিকস প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত কমিকস নিয়ে একটা সংকলন। এছাড়া আমাদের উপদেষ্টা ও প্রথিতযশা কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের কমিকস নিয়ে একটা সংকলন আসবে। শিশুদের জন্য আসবে ‘ডাইনো ও টুটি’ সিরিজের নতুন বই। এ ছাড়াও আমাদের নিয়মিত সিরিজের সব মিলিয়ে ৭টা নতুন বই আমাদের আনার পরিকল্পনা আছে। 

প্রকাশনা জগতে ঢাকা কমিকস-এর প্রতিশ্রুতি কী?

বাংলা ভাষায় আরো নিবেদিত পাঠক তৈরি করা। অনেক ভালো পাঠকের পাঠাভ্যাস শৈশবে কমিকস থেকেই শুরু। আমরা সেই জায়গাটায় কাজ করতে চাই। একইসঙ্গে বড়োদের জন্যে গ্রাফিক নভেল কালচারটাও বাংলায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, আর সবসময় নিজেদের মৌলিক গল্প বলা- এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়