ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

সুযোগ পেলে পুতুল নাচের পুনর্জাগরণে অবদান রাখব: জিয়া আমিন

এস. এ. শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ১৫ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৫, ১৫ মার্চ ২০২৪
সুযোগ পেলে পুতুল নাচের পুনর্জাগরণে অবদান রাখব: জিয়া আমিন

জিয়া আমিনের এই কোরিওগ্রাফি সম্প্রতি প্রশংসিত হয়েছে

পুতুলের সাজে ‘এই যে দুনিয়া কীসের লাগিয়া’ গানের সঙ্গে নাচছে একদল শিশু। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নাচের এই দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করেছে! মূলধারার গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রচার পেয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে। নাচটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। জেলার ঐতিহ্যবাহী এই নাচ এখন বিলুপ্তপ্রায়। নাচের এই ধারা টিকিয়ে রাখতে পুতুল নাচের আদলে নাচটি তৈরি করেছেন নৃত্যশিক্ষক মোহাম্মদ আল সাইফুল আমিন জিয়া। তিনি ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। ‘জিয়া আমিন’ নামে তিনি স্থানীয়ভাবে পরিচিতি। 

স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিশুদের এই নাচ প্রদর্শিত হয়। নাচের একটি ভিডিও জিয়া আমিনের ফেসবুক পেজ 'মেহেক জিয়া' থেকে ছড়িয়ে পড়ে। 

কয়েক দশক আগে ‘রয়েল বীণা অপেরা’র কর্ণধার প্রয়াত ধন মিয়া পুতুলনাচের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিশ্বে পরিচিত করেন। তিনি কাপড়ের পুতুলের পেছনে সুতা বেঁধে সমাজের নানা অসঙ্গতির গল্প প্রদর্শন করতেন। পুতুলগুলোকে নাচাতেন। সেই ধন মিয়ার সান্নিধ্য পাওয়া জিয়া আমিন এবার ভিন্ন আদলে পুতুল নাচকে হাজির করেছেন। গুণী এই নৃত্যপ্রশিক্ষক তাঁর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস. এ. শান্ত।  

রাইজিংবিডি: ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের আদলে শিশু শিক্ষার্থীদের একটি চমৎকার পরিবেশনা উপহার দিয়ে আপনি সাড়া ফেলে দিয়েছেন। আপনার এই কোরিওগ্রাফির আদলে এখন দেশের নানা প্রান্তে পুতুল নাচ হচ্ছে- জানেন তো! 

জিয়া আমিন: ফেসবুকে আমি এমন ভিডিও দেখেছি। মঞ্চে শিশুরা পুতুল নাচ পরিবেশন করছে। আমার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায়; মানুষ ভালোভাবে নেওয়ায় সত্যিই আমি এক্সাইটেড! খুবই ভালো লাগছে যে, আমার একটা কাজ সবাই খুব ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আমি তাদের অন্তরে জায়গা করে নিতে পেরেছি এবং আমার বিষয়টি এখন অনেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এ জন্য আমি সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। 

রাইজিংবিডি: সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতেও আপনি এই নাচ প্রদর্শন করেছেন। অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আপনি বলা চলে জাতীয় মঞ্চে এলেন। এর মধ্য দিয়ে আপনার দায়বদ্ধতা বাড়ল বলে মনে করেন?

জিয়া আমিন: এখন তো সেটাই মনে হচ্ছে। যেহেতু সারাদেশে এই নাচের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকি মহোদয় আমাদের যতটা সম্মান দিয়েছেন, তাঁর কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমরা কখনো ভাবিনি তিনি আমাদের এভাবে সম্মানিত করবেন। আমার স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যামও বলছিলেন যে, তিনি (ডিজি) এত বড় মানুষ আমাদের কী পরিমাণ সম্মান করেছেন! ডিজির আগ্রহে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় মিষ্টি মেলার মঞ্চে আমাদের শিক্ষার্থীদের পুতুল নাচ একদিনে দুবার পরিবেশন করতে হয়েছে। আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেরার সময় তিনি বাসে উঠে শিশুদের আদর করেছেন। আমি মনে করি, এসব ঘটনায় আসলেই সমাজ, জেলা ও দেশের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে গেছে। 

জিয়া আমিন

রাইজিংবিডি: এই পরিচিতি ও দায়বদ্ধতা কিছু ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আপনাকে চাপে ফেলবে! বড় পরিসরে কাজ করতে গেলে আপনাকে অনেক বেশি ভাবতে হবে। সময় দিতে হবে। তা হয়ত আপনার ব্যক্তি জীবনে প্রভাব ফেলবে; এমনকি পারিবারিক জীবনেও। আপনি কি এ জন্য প্রস্তুত?

জিয়া আমিন: হ্যাঁ আমি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আসলে একটা বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে আরেকটা বিষয়ে একটু ছাড় দিতে হবে– এটাই স্বাভাবিক। আরেকটা বিষয় হলো, পারিবারিকভাবে এখন পর্যন্ত আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। বড় মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে, ছেলেটা ক্লাস থ্রি-এ। নাচের ব্যাপারে আমার পরিবার থেকে কোনো বাধা আসেনি, এখনো আসছে না। তারা বিষয়টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। সহযোগিতা করছে। আশা করি ভবিষ্যতেও করবে। 

রাইজিংবিডি:  আপনি কখন থেকে নাচের সঙ্গে জড়িত?

জিয়া আমিন: আমি ছয় বছর বয়স থেকেই নাচ করি। আমার বয়স যখন ১৫ তখন থেকে আমি বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন: ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা– এসব অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে ডিসপ্লে করা শুরু করেছিলাম। এখনো করছি শিক্ষার্থীদের নিয়ে। প্রায় ১৫ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিখ্যাত সুর সম্রাট দি ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে আমি নাচের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু একাডেমির সঙ্গে ১০ বছর ধরে কাজ করছি। বিভিন্ন স্কুলেও আমি কাজ করেছি এবং করছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবার; যেখানে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে এতিম শিশুরা থাকে, তাদের আমি কম করে হলেও ২০ বছর ধরে নাচ করিয়েছি। এখন সেখানে আমার জায়গায় অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন। এখন আমি আবার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। সামাজিক প্রতিবন্ধীদের নিয়েও কাজ করেছি, এখন কাজ করছি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে। আমাদের জেলায় রয়েছে আসমতুন্নেছা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল, সেখানে শামীমা শিকদার দিনা ম্যাডামের আহ্বানে কাজ করে যাচ্ছি। 

রাইজিংবিডি: এই যে আপনি ছোটবেলা থেকেই নাচ করছেন, আবার আপনি প্রশিক্ষক বা শিক্ষক হিসেবে একই কাজে জড়িয়ে গেলেন, এতে কোনো সামাজিক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

জিয়া আমিন: আসলে নাচকে আমাদের দেশের মানুষ ভালো চোখে দেখে না। এখন দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, অনেকেই ভালোভাবে নিচ্ছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন তো এরকম আধুনিক মানসিকতা ছিল না- কাজ করতে গেলে একটু তো সমস্যা হয়েছেই। আর আমি যেহেতু ছেলে, নাচ করতে গেলে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসে। অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে বা বলেছে। আবার কেউ কেউ উৎসাহও দিয়েছে। দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে আমি আজকের এই জায়গায় এসেছি। 

রাইজিংবিডি: ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে অনেকে ‘সংস্কৃতির রাজধানী’ বলে। সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক বিখ্যাত মানুষজনের জন্ম এই জেলায়। আবার এই জেলায় প্রতিক্রিয়াশীল মানুষও আছে। তাদের দিক থেকে কোনো নেতিবাচক আচরণ বা কথার সম্মুখীন হয়েছেন কখনো?

জিয়া আমিন: না আমি এরকম কিছুর সম্মুখীন কখনো হইনি। ছোটবেলা থেকেই তো এই শহরে বড় হয়েছি, আমাদের বাড়ি এখানে। আমাকে সবাই আদরই করেছে। সেরকম কোনো সমস্যায় কখনো পড়িনি। বেশিরভাগ মানুষ আমাকে সহযোগিতাই করেছে। আমাদের প্রতিবেশীরা আশেপাশের যারা মুক্ত-বুদ্ধির লোকজন, বিশেষ করে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাট্যজন ও সাংবাদিক মঞ্জুর আলম ভাই খুবই অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। নাচ নিয়ে এখন পর্যন্ত ঝামেলায় পড়িনি। ছোটখাটো বিষয় যেটা আগে বলেছি, কিছু মানুষ একটু ইয়ারকি–মশকরা করতো বা করে। এগুলো বড় বিষয় নয়। 

রাইজিংবিডি: এখন আপনার কোরিওগ্রাফি যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষাভাষীরা দেখেছে, তারা সাধুবাদ জানাচ্ছে। আমার বিশ্বাস এমনকি যারা ভিন্ন ভাষার মানুষ, এই নাচের ভিডিও দেখলে তাদেরও ভালো লাগার কথা। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আপনি কি অন্য কোথাও থেকে কোরিওগ্রাফির জন্য কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন?

জিয়া আমিন: না এখন পর্যন্ত এ রকম প্রস্তাব পাইনি। তবে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমেরিকা, কানাডা, সিঙ্গাপুর, লন্ডন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পরিচিত যেসব প্রবাসী রয়েছেন, তারা নানাভাবে যোগাযোগ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কোরিওগ্রাফির জন্য সেরকম অফার কেউ করেননি। কেউ যদি প্রস্তাব দেয় সেক্ষেত্রে চিন্তা–ভাবনা করে দেখব। 

রাইজিংবিডি: এখন তো আমাদের স্বাধীনতার মাস, মার্চ চলছে। এ মাসে মহান স্বাধীনতা দিবসসহ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী রয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশন করার জন্য আপনার স্কুলের পুতুল নাচ করা শিশু শিক্ষার্থীদের কোনো প্রস্তাব আছে? থাকলে প্রস্তুতি কেমন? 

জিয়া আমিন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমার স্কুলের ছেলেমেয়েরা অংশ নেয়। এবার যেহেতু রোজার মধ্যে দিনটা পড়েছে, সন্ধ্যার দিকের অনুষ্ঠানগুলো হয়তো হবে না। দিনের বেলা যে অনুষ্ঠান পিটি, প্যারেড, ডিসপ্লে– এগুলো হবে। সেটাতে আমরা অংশ নেব। এবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমাদের পুতুলগুলো নিয়েই উপস্থিত হবো।  ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ নিয়ে আমাদের জেলা শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে উপস্থাপন করার চিন্তা করেছি। 

রাইজিংবিডি: আপনারা যেহেতু ঢাকায় পুতুল নাচের একটা পরিবেশনা শেষে করেছেন, ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছেন– এর মধ্যে ঢাকায় আর কোনো আমন্ত্রণ পেয়েছেন?

জিয়া আমিন: হ্যাঁ। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় শিশু একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) মহোদয় আমার স্কুলের প্রিন্সিপাল মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী (১৭ মার্চ) উপলক্ষে শিশু একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগামী ১৮ মার্চ আমাদের স্কুলকে পারফর্ম করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 

রাইজিংবিডি:  আবারও আপনার পুতুল নাচ প্রসঙ্গে আসি। আপনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন। সে ক্ষেত্রে পুতুল নাচের যে ভাবধারা ছিল; আমি যতদূর জানি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সমস্যাগুলো ছোট ছোট নাটিকায় পুতুলের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো। এখন আপনি নাচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন? নাকি পুতুল নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে? 

জিয়া আমিন: আমি যদি ওই রকম কোনো নোটিশ পাই বা আমাদের গুণীজনরা যদি কোনো ধরনের ছোট নাটক দেয়, আমি চেষ্টা করব। আমি চাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচটা ছড়িয়ে পড়ুক। 

রাইজিংবিডি:  আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, আপনি স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে পুতুল নাচের আদলে একটা কোরিওগ্রাফি করেছেন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচের মূল ভাব ছিল কাপড়ের পুতুলের ব্যবহারে সমাজের অসঙ্গতি নাটিকার মাধ্যমে তুলে ধরা। প্রকৃত পুতুল নিয়ে সেরকম কোনো কাজ করার ইচ্ছা বা চিন্তা আপনার আছে কিনা।

জিয়া আমিন: সত্যিকারের পুতুল দিয়ে বড় পরিসরে আমার পক্ষে কাজ করা খুব একটা সম্ভব হবে না। কারণ সেটা করতে হলে অনেক পুতুল সংগ্রহ করতে হবে। সুতা দিয়ে নাচ করাতে হবে। সেটা করার শিক্ষা বা দক্ষতা আমার নাই। আমি ওই ব্যাপারে পারদর্শী নই। তবে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়েই নাচ করাতে চাই, যেটা সমাজকে বার্তা দেবে। এ রকম হলে অবশ্যই করব। 

নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নৃত্য প্রশিক্ষক জিয়া আমিন

রাইজিংবিডি: আপনার পুতুল নাচের অনুপ্রেরণা যাকে দেখে এসেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই বিখ্যাত পুতুল নাচের আয়োজক প্রয়াত ধন মিয়া ও তাঁর কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

জিয়া আমিন: ধন মিয়া কাকা আমার আব্বার বন্ধু ছিলেন। আমরা একই এলাকার। কাকার নেশা ছিল মাছ ধরা। তিনি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতেন। আর আমার আব্বা সরকারি চাকরির পাশাপাশি ফিশারিজের অর্থাৎ পুকুরে মাছ চাষের ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে আমাদের সঙ্গে কাকার ওঠাবসা ছিল। বাবার সঙ্গে আমাদের বাসায় আসতেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যত জায়গায় পুতুল নাচ হতো, ধন মিয়া কাকা বলতে গেলে একাই করতেন। তিনি আমার বড় চাচার বাসায় দু–তিনবার এবং আমাদের বাসায় দু–তিনবার পুতুল নাচ দেখিয়েছিলেন। তখন আমার ভেতরে কিউরিসিটি জাগত যে, পুতুল আবার কী করে নাচে। কাকা যে পুতুল নাচাতেন, সেই পুতুলের পেছনে বাঁধা সুতাগুলো বাইরে থেকে দেখা যেত না। তিনি নাচ দেখানোর পর যখন পুতুলগুলো রেখে দিতেন, আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম- কাকা পুতুল কীভাবে নাচে? তিনি তখন সুতা দেখাতেন, আমি জিজ্ঞেস করতাম এগুলো দিয়ে কীভাবে নাচানো হয়? তখন কাকা দেখাতেন আর বলতেন ভাতিজা তুমি তো বুঝবা না। আমি সুতা দিয়ে এভাবে এভাবে পুতুল নাচাই। ওই বিষয়টাই আমার মাথায় কাজ করেছে। আমরা তো বিভিন্ন সময় নানা ডিসপ্লে করি। স্কুলের খেলা ছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রাম করি। হঠাৎ আমি চিন্তা করলাম পুতুল নাচ আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটা ঐতিহ্য। পুতুল দিয়ে তো আর আমি পারবো না, দেখি আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো যায় কিনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেভাবে তৈরি করেছি। কাকা পুতুলগুলোকে নাচ করাতেন সুতা দিয়ে, আর আমি শিক্ষার্থীদের পুতুলের মতো নাচাতে ব্যবহার করেছি ইলাস্টিকের রাবার। এই রাবার টান দিলে লম্বা হয়, আবার ছেড়ে দিলে খাটো হয়। 

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আমন্ত্রণে আবার ঢাকায় আসছেন। এ অবস্থায় আমরা বলতেই পারি যে আপনি জাতীয় পর্যায়ের কোরিওগ্রাফার হতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আপনার সামনের স্বপ্ন বা পথ চলার বাস্তবতাটা কেমন বলে মনে করছেন?

জিয়া আমিন: আসলে একা একা খুব বড় কিছু করা সম্ভব নয়। আমার পাশে যদি অনেকে এগিয়ে আসে বা সেরকম জায়গা করে দেয় তাহলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু সম্ভব। স্বপ্নপূরণের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, আমি হয়তো সেই পরিশ্রমটা করতে পারব। বাকীটা পূরণের মালিক আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা। ছোটবেলা থেকেই আমি পরিশ্রম করে গেছি, এখন যেটা মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এটা হয়তো আমার পরিশ্রমেরই অংশ। নাচে তো আমি নিজে নিজে এসেছি। আমার সেরকম কোনো শিক্ষাগুরু ছিল না। আমি অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এ জায়গায়  এসেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো ভালো প্ল্যাটফর্ম পাই বা আমাদের দেশের গুণী ব্যক্তিরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসে, ইনশাল্লাহ আমি খুব ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করব। পুতুল নাচের মতো একটা লোকজ সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে আমি অবদান রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়