একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজউক চেয়ারম্যান
‘দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, স্মার্ট সেবা পাবে গ্রহীতা’
গত ৮ এপ্রিল রাজউকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার। দায়িত্ব নিয়ে রাজউককে একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্মার্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বহুবিদ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। রাজউককে সরকারের একটি ‘মডেল প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করার তার এই প্রয়াস রাজউকের সেবা গ্রহীতাদের আশাবাদী করে তুলেছে। কিন্তু কেমন হবে সেই পরিকল্পনা? কীভাবেই-বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি অগ্রসর হবেন— সম্প্রতি রাজউক কার্যালয়ে রাইজিংবিডিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি রাজউককে কীভাবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চান, এ বিষয়েও বিস্তারিত বলেছেন রাজউক চেয়ারম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি’র সিনিয়র রিপোর্টার এসকে রেজা পারভেজ
রাইজিংবিডি : আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর রাজউককে আটটি জোনে ভাগ করার কথা বলেছিলেন। এতে কি সেবা বিকেন্দ্রীকরণ হবে? সেবাগ্রহীতা কীভাবে উপকৃত হবেন?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার : আসলে এই প্ল্যান আগেই করা ছিল। শুধু বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। সেটি শুরু হয়েছে। পুরো ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে এই রাজউক ভবনে আসতে হয়। এখানে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা হয়, দালাল চক্র চলে আসে। আটটা জোনে বিকেন্দ্রীকরণ করে ওইসব অফিস থেকে সার্ভিস দেয়া হবে। এতে সবার এখানে আসার প্রয়োজন হবে না। এটা থাকবে হেড কোয়ার্টার।আমরা সেবা নগরবাসীর দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একটা অফিস ইতোমধ্যে চলে গেছে। একটা অফিস চলে যাচ্ছে কারওয়ান বাজারে, আরেকটা চলে মতিঝিলে, আরেকটা বিসিআইসি ভবনে। অন্য একটা অফিস মহাখালীতে আছে। আমরা নারায়ণগঞ্জে একটা করবো। অর্থাৎ জনগণ যাতে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পায় সহজে কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
রাইজিংবিডি : অনেক সময় দেখা যায়, অনেক বছরের পুরোনো ফাইল পাওয়া যায় না। এর আগে সার্ভার থেকে ৩০ হাজার ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল— এ ঘটনা হাইকোর্ট অব্দি পৌঁছেছিল। পুরোনো ফাইলসহ সব ধরনের ফাইলের সুরক্ষিত ডেটাবেজ করা, তথা ডিজিটাইলজড করার ক্ষেত্রে রাজউকের পদক্ষেপ কী?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার : এটা রাজউকে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। আমি এসে দেখলাম, পূর্বাচলের ৫-৭টা ফাইলের মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা একটা কমিটি করেছি। যাতে কে কোন প্লটের মালিক, সেগুলো নিরুপন করা যায়। ফাইলগুলো ডিজিটালাইজড করার জন্য কাজ করছি। বিষয়টি আরো তরান্বিত করার জন্য আমাদের এমএসটিআইকে আমরা সংযুক্ত করছি। এমএসটিআইয়ের একটি বড় টিম দিনরাত কাজ করছে এ বিষয়ে। আগামী এক, দুই মাসের মধ্যে আমাদের সমস্ত প্লট, গুলশান থেকে শুরু করে ঝিলমিল, পুর্বাচল, উত্তরা আপনারা যে কোনো জায়গায় বসে মোবাইলে বলতে পারবেন কে কোন প্লটের মালিক। যাকে আমরা বলছি স্মার্ট সেবা। এনআইডি এবং ঠিকানাসহ মালিককে পেয়ে যাবেন। এতে স্বচ্ছতাও আসবে। এ ছাড়া যদি ট্রান্সফার করতে হয় এবং সেজন্য যে ফি দেবে, সেই ফি বাড়িতে বসে দিতে পারবে। তথ্য চলে আসবে আমাদের কাছে, এখান থেকে তা পরিবর্তন করে দেব। তিনমাসের মতো সময় লাগতে পারে।
রাইজিংবিডি : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের ইশতেহারেও দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাজউকে দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের দাবি জোরালো হচ্ছে। রাজউক দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আপনার ভূমিকা কী থাকবে?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার : রাজউকে যদি কারো এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের। কাজের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবো রাজউকে। যে কোনো বিষয় যদি প্রকাশ পায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে। অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি, সেই নীতিতে রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে আমি অবিচল।
সাক্ষাৎকারের শেষ অংশ পড়ুন আগামীকাল
তারা//