ঢাকা     সোমবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১ ১৪৩১

বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া শিশুর ভাগ্য নির্ধারণ ৯ আগস্ট

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ২৫ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া শিশুর ভাগ্য নির্ধারণ ৯ আগস্ট

মামুন খান : শিশুটির বয়স আর কতই বা হবে, ৮-৯ মাস। গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা, মাথার চুল কোঁকড়ানো ও কালো। শিশুটিকে একনজর দেখলে যে কেউই মায়ায় পড়ে যেতে পারেন। আর সেই শিশুর দু’চোখ সবচেয়ে নিরাপদ স্থান মায়ের কোল খুঁজছিল।

হ্যাঁ, বলছিলাম গত ৯ জুলাই বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া সেই শিশুটির কথা। কাগজে-কলমে তার নাম ফাতেমা। বাবা-মায়ের নামের স্থান শূন্য। নেই কোনো স্বজনের ঠিকানাও। গত দুসপ্তাহ ধরে শিশুটি ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। কিন্তু এত দিনেও কেউ তাকে নিতে আসেনি। কিন্তু সেখানে এত ছোট শিশুকে রাখা হয় না। এজন্য মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সুমন মধু ফাতেমার মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন।

আর ফাতেমাকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করতে ছয় দম্পত্তি আবেদন করেন।

ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ওই আট-নয় মাসের শিশুর ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আগামী ৯ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন। আর এরই মধ্যে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার আদেশও দিয়েছেন আদালত।

বিচারক প্রবেশন অফিসার সুমন মধুকে বলেন, শিশুটিকে তার নিজের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে যে নারীর কোলে শিশুটি ছিল সেই নারী এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিতে বলেন।

আর যদি আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে পাওয়া না যায়, তাহলে শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করা ছয় দম্পতির মধ্যে যেকোনো এক দম্পতিকে বাছাইপূর্বক শিশুটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাহাবুদ্দিন মিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, শিশু ফাতেমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আদালতে ইতোমধ্যেই ছয় দম্পতি আবেদন করেছেন। এরা হলেন, সেলিনা আক্তার দম্পতি, শ্যামলী আক্তার, লায়লা নূর, নিঝুম আক্তার, শাহনাজ বিনতে হান্নান ও দুলশাদ বেগম বিথী দম্পতি। শিশুটির প্রকৃত ঠিকানা না পেলে এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে আদালত শিশুটির দায়িত্ব কোনো এক দম্পতিকে দেবেন।

এদিকে আবেদন প্রার্থীরা ফাতেমাকে তাদের নিজের সন্তানের মতো করে মানুষ করবেন, প্রতিষ্ঠিত করে তুলবেন, বোঝা মনে করবেন না বলে জানান।

জানা যায়, ৯ জুলাই বিজি-০০৮৫ বিমানে জর্ডান থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা একটি ফ্লাইটে স্বপ্না নামের এক যাত্রীর কোলে শিশু ফাতেমাকে রাখার অনুরোধ করেন তার মা। স্বপ্নাও মায়াবশত শিশুটিকে কোলে নেন। শিশুটিকে কোলে নিয়ে স্বপ্না শিশুটির মায়ের সঙ্গে খোশগল্প করতে থাকেন। রাত ৯টায় বিমানটি বিমানবন্দরে পৌঁছালে শিশুটির মা স্বপ্নাকে শিশুকে নিয়ে গোলচত্বরের ওভারব্রিজের কাছে দাঁড়াতে বলেন এবং তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে বুকিংকৃত মালামাল গ্রহণ করে ওই স্থানে আসবেন বলে আশ্বাস দেন। ওইদিন ওই নির্দিষ্ট স্থানে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে স্বপ্না তার বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যান। পরের দিন বিকেল ৩টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে বিমানবন্দরের এপিবিএন পুলিশের কাছে আসেন। পরে এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয় (জিডি নং ৪০৪)। পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পাঠানো হয়। বর্তমানে শিশুটি সেখানেই রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুলাই ২০১৭/মামুন খান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়