ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শিশু অপহরণ : দুজনের ফাঁসি, আটজনের যাবজ্জীবন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু অপহরণ : দুজনের ফাঁসি, আটজনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চার বছর আগে রাজধানী থেকে টিএনজেড গ্রুপের মালিকের ছেলে আবিরকে (৮) অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় দুজনের ফাঁসি এবং আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মশিউর রহমান মন্টু (৪০) ও মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বর (৩৫)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রেজাউল করিম (৩৬), নজরুল ইসলাম (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৮), মো. ইকবাল হোসেন শুভ (২৮), সজীব আহমেদ ওরফে কামাল উদ্দিন (৪৭), মো. আলীম হোসেন চন্দন ওরফে চঞ্চল (২৭), কাউসার মৃধা (২৫) ও রেজা মৃধা (৩০)।

মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি ধারায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আসামিদের অর্থদণ্ডও করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরাসহ প্রথম আটজন আসামি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত শেষের দুইজন পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জহির উদ্দিন মো. বাবর ও শাহ মো. অলিউল্যাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মামলাটির বিচারকালে ট্রাইব্যুনাল ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ১৮ মে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় আবির অপহরণের ঘটনায় মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর একই থানার ইন্সপেক্টর মো. কবির হোসেন হাওলাদার ১০ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার তদন্তকালে কয়েকজন আসামি স্বীকারোক্তিমমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলায় বলা হয়, টিএনজেড গ্রুপের মালিক শাহাদাত হোসেনের ছেলে আবির (৮)। শিশু আবির উত্তরার একটি মাদ্রাসায় পড়ত। তাকে অপহরণের জন্য প্রায় চার মাস ধরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও তথ্য সংগ্রহ করেছিল অপহরণকারীরা। এজন্য পল্লবীতে একটি বাসাও ভাড়া করা হয়। তারা নিয়মিত শিশুটির গতিপথ অনুসরণ করে। যে মাদ্রাসায় শিশুটি পড়ে সেই মাদ্রাসায় পরিচিত একজনের বাচ্চাকে ভর্তিও করে অপহরণকারীরা। এছাড়া, অপহরণকারীদের সঙ্গে যুক্ত টিএনজেড গ্রুপের তিন কর্মী বিশেষ করে গাড়িচালক রেজাউল নিয়মিত তথ্য দিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২ মে শিশু আবির গাড়িতে করে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে বনানী উড়ালসড়কের নিচে অপহরণকারীরা তিনটি গাড়ি নিয়ে ওই গাড়ির গতিরোধ করে। নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে শিশুটি, ওই গাড়ির চালক ও শিশুটির তত্ত্বাবধানকারীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। প্রথমে শিশুটিকে তারা আশ্বস্ত করে যে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অপরাধীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে এসেছে। এরপর শিশুটিকে নিয়ে তারা পল্লবীর ভাড়া বাসায় যায়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শিশুটি কাঁদতে থাকে। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবাকে ফোন করে তার কান্নার শব্দ শোনায়। শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। শুরু হয় দর কষাকষি। ওই রাতেই ৩০০ ফুট (পূর্বাচল) সড়কে শিশুটিকে বহনকারী গাড়িসহ চালক ও তত্ত্বাবধানকারীসহ ফেলে আসে অপহরণকারীরা। চার দিন দর কষাকষির পর ২ কোটি টাকায় রফা হয়। ৬ মে তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন শাহাদাত হোসেন। এছাড়া, ওই দিন সন্ধ্যায় হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে ২৭ লাখ নগদ টাকা নিয়ে নিজেই অপহরণকারীদের দেন। এরপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা অপহরণকারীরা শিশু আবিরকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী তার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার পর অপহরণকারীদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব থেকে অপহরণকারীদের টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে ২০১৫ সালের ১৭ মে আসামি রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন মো. বাবর, মিজানুর রহমান ও শাহ মো. অলিউল্যাগণ আটক হয়। তাদের আটকের পর মিজানুরকে নিয়ে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মে ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়