ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ডিআইজি মিজান কারাগারে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিআইজি মিজান কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপন এবং মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক, ডিআইজি মিজানুর রহমানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

এদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়।

আসামি পক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রাক্তন পাবলিক প্রসিকিউটর এহেসানুল হক সমাজী মামলা পরিচালনা করেন। এ আইনজীবী প্রথমে আসামির কাছ থেকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেয়ার অনুমতি গ্রহণ করেন।

এরপর ডিআইজি মিজান তাতে স্বাক্ষর করলে আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘আমরা একটি জামিনের আবেদন দিয়েছি। তবে এখানে দেখতে হবে এ আদালতে জামিনের আবেদন শোনার এখতিয়ার আছে কি না।’

তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আগে এ ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ছিল। কিন্তু গত ২০ জুন দুদক বিধি সংশোধন করে এ আদালতকে জামিন রিমান্ডসহ সকল ধরণের শুনানির গ্রহণের এখতিয়ার দিয়েছেন।’ তখন এহেসানুল হক সমাজী বলেন, ‘সেখানে জামিন শুনানির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে আদালত যদি মনে করেন শুনবেন তবে আমরা শুনানি করতে পারি।’

এরপর এ আইনজীবী জামিন আবেদনে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে দুদক যে মামলায় জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও গোপনের যে অভিযোগ করেছে তার সমর্থণের আজ (মঙ্গলবার) আদালতে কোন ডকুমেন্ট দাখিল করতে পারেনি। এছাড়া কি প্রক্রিয়ায় আসামি অর্থ মানিলন্ডারিং করেছে তাও বলা নেই। আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা দুদক আইন অনুযায়ী জামিন অযোগ্য হলেও তা ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তালিকার অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় আসামি ওই আইনের ৪৯৭ ধারার বিধান অনুযায়ী জামিন পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। এছাড়া আসামি অসুস্থ, তিনি উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা। চাকুরী জীবনে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রীয় অনেক পদক পেয়েছেন, জঙ্গীদমনে কাজ করেছেন সে বিবেচনায়ও তিনি জামিন পেতে পারেন।’

এরপর দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর কাজল মামলার এজাহারের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘মামলার  এজাহারেই অভিযোগ সুষ্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। তিনি (আসামি মিজান) চাকুরী জীবনে কতটাকা আয় করতে পারেন সে হিসেব যেমন দেয়া আছে, তেমনি কতটাকা অবৈধভাবে অর্জন করে ওই টাকায় নিজের, নিজের স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে কি কি সম্পদ করেছেন, তার বর্ণনাও আছে। আর জামিনের ক্ষেত্রে এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা প্রয়োগ হবে না। এখানে প্রয়োগ হবে ক্রিমিনাল ল’ এমেইমেন্ট আইন। তাই জামিন পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া আসামি মহামান্য হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন। হাইকোর্টই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। এখানে এ বিষয়টিও দেখতে হবে। ’ ওই সময় ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর, মীর আহমেদ আব্দুস সালাম উপস্থিত ছেলেন।     

উভয় পক্ষের ১ ঘন্টাব্যাপী শুনানি শেষে বিচারক দুপুর সাড়ে ১২টায় বলেন, ‘হাতে সময় কম তাই বিস্তারিত আদেশ আদালতে দিতে পারলাম না। আপনারা পরে দেখে নিবেন। আসামি কারাগারে যাবে।’

এর আগে গত ২৪ জুন মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার, ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকেও আসামি করা হয়।

মামলার পর আত্মগোপনে থাকা এ কর্মকর্তা গত রোববার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। যার ওপর গত সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

জোর করে এক নারীকে বিয়ে করে তা গোপন রাখতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকির মতো ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় তার অবৈধ সম্পদের সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে দুদক।

মামলায়  ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ জুন ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন।

গত ১৯ জুন মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২জুলাই ২০১৯/মামুন খান/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়