কে এই জিকে শামীম?
সাত দেহরক্ষী, আর দুইশ কোটি টাকার এফডিআরসহ আটক হওয়া ‘যুবলীগ’ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম, এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টে ফেলা যুবদল থেকে আওয়ামী লীগ হওয়া এই নেতা নিজেকে পরিচয় দেন যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
শামীম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম দ্বিতীয়। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুল পাস করার পর শামীমকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বেড়ে উঠেছেন শামিম। ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান। সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে তিনি ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। বাংলাদেশের সকল ঠিকাদারকে গণপূর্তে কাজ করতে হলে তাকে বলে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রথম সারির (১-২০) সকল ঠিকাদার তার বাইরে ভয়ে কথা বলার সাহস পেতেন না।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন শামীম। ওই পদে এর আগে ছিলেন এসএম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যান।
যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যুবলীগে জিকে শামীমের কোনো পদ নেই। সে নিজেই নিজেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় যুবলীগের পরিচয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশনের যত বড় বড় কাজ হয়, সব কাজ তার নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ করতে পারেন না। যদি কেউ জি কে শামীমকে না জানিয়ে দরপত্র ক্রয় করেন তবে তার পরিণাম হয় ভয়ঙ্কর।
ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর প্রটেকশনে চলেন জি কে শামীম। সবার হাতেই শটগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন জি কে শামীম। বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের।
শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। নিজের কার্যালয় বানিয়ে বসেন নিকেতন এলাকায় একটি ভবনে। বাসাবোতে আরো রয়েছে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ’ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।
যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মদ পেয়েছে র্যাব। শামীমের পাশাপাশি তার কয়েকজন দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়েছে।
ঢাকা/পারভেজ/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম