ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এনু-রুপনের সঙ্গে আশ্রয়দাতাও রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এনু-রুপনের সঙ্গে আশ্রয়দাতাও রিমান্ডে

মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া তাদের আশ্রয়দাতা মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী শেখ সানি মোস্তফার তিন দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মানিলন্ডারিংয়ের পৃথক দুই মামলায় আসামিদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর মেহেদী মাকসুদ।

গেন্ডারিয়া থানার মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় এনামুল হক এনু ও শেখ সানি মোস্তফার ১০ দিন করে এবং সূত্রাপুর থানার মামলায় রুপন ভূঁইয়ার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এনু ও সানির রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এনামুল হক এনু একজন পেশাদার ক্যাসিনো বা জুয়া ব্যবসায়ী। মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারীদের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। এনুর বিশ্বস্ত কর্মচারী মামলার এজাহারনামীয় আসামি হারুন অর রশিদের ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অর্থ আড়াল করার উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখে। হারুনের বাসায় অভিযান চালিয়ে এক কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। আর শেখ সানি মোস্তাফা মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে এনুর নিয়োগকৃত বিশ্বস্ত কর্মচারী। ক্যাসিনো খেলা পরিচালনায় সহায়তার জন্য প্রতিদিন তাকে ৮০০ টাকা হারে বেতন প্রদান করে। র‌্যাব ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান পরিচালনাকালে সানি মোস্তফা এবং হারুন পালিয়ে যায়। সানি মোস্তফা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এর ৪/এফ ভবনের ভাড়া বাসায় এনু এবং রুপনকে আশ্রয় দিয়ে সহায়তা প্রদান করে। মামলার ঘটনাটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। এজারহার নামীয় হারুন পলাতক আছেন।

রুপনের মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রুপর ভূঁইয়া ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অবৈধ অর্থ আড়াল করতে বাড়িতে লুকিয়ে রাখে। র‌্যাব-৩ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং আড়াই কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে। র‌্যাব ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান পরিচালনাকালে রুপন কৌশলে পালিয়ে যায়। রুপন ভূঁইয়া তার অপরাপর সহযোগিসহ সংঘবদ্ধ মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো খেলা পরিচালনা করার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ক্যাসিনো খেলার সাথে আরো কারা জড়িত সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ, খেলা পরিচালনার জন্য আসামিরা কতজন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছিল এবং তাদের কত টাকা প্রতি মাসে বেতন দিত সে সংক্রান্ত তথ্য, সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের তথ্যহ, কে কোন উপায়ে কার কাছে ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অর্থ সংগ্রহ তা জানার জন্য, ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অর্থ আরো কোন জায়গায় রাখা হয়েছে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাথে কি উপায়ে কার মাধ্যমে যোগাযোগ করে ক্যাসিনো পরিচালনা করতো, আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আব্দুর রউফ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।

আসামিদের পক্ষে শাম্মী আক্তার, ওসমান গণি রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন।

সোমবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার এনু ছিলেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। রুপন ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে এনামুল হক এনু ও রুপন ভুঁইয়াকে সিআইডি গ্রেপ্তার করার পরই অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন এ্যারেস্ট) আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আগামী ১৯ জানুয়ারি আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করেন আদালত।

এনামুল হক এনুর বন্ধু হারুন অর রশিদের বাসা থেকে এক কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাব-৩ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমান গেন্ডারিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এনামুলের সাথে তার বন্ধু হারুন অর রশিদকে আসামি করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনামুল হক এনু মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ রাজধানীর একাধিক ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোর পরিচালনাকারী অন্যতম সদস্য। হারুন অর রশিদ এবং এনামুল হক এনু ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি অবৈধভাবে উপার্জন করে আসছে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ গোপন করার জন্য হারুনের বাসায় রেখেছিল।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রুপনের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং আড়াই কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে র‌্যাব-৩। এ ঘটনায় রুপনকে আসামিকে করে সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-৩ এর ইন্সপেক্টর আবুল বাশার।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ওই টাকা ও স্বর্ণের মালিক রুপন ভূঁইয়া মতিঝিলের বিভিন্ন ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে আসছেন। ওই অবৈধ টাকার একাংশ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার কিনে এনামুল হক বিদেশে পাচার করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার বাড়ির সিন্দুকে জমা রাখেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তার অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করার উদ্দেশ্যে আসামি টাকা ব্যাংকে না রেখে লোহার সিন্দুকে রেখেছিলেন।


ঢাকা/মামুন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়