ব্যবসার আড়ালে পাপিয়ার অপরাধজগৎ
শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। পেশায় ব্যবসায়ী। আছে রাজনৈতিক পরিচয়ও। এসব পরিচয়ের আড়ালে তিনি গড়ে তুলেছেন ভয়ানক অপরাধজগৎ। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার অনেক কুকীর্তির তথ্য বেরিয়ে আসছে।
রোববার দুপুরে এ বিষয়ে কথা হয় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেমের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সম্প্রতি জাল টাকা এবং নারীঘটিত কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পাপিয়ার অজানা সব কাহিনী জানা যায়। তিনি যে বিদেশে টাকা পাচারসহ ভয়ঙ্কর অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় তার সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের প্রাথমিক সব তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
র্যাব জানায়, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন শোরুম ‘কার একচেঞ্জ’ এবং নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছিল তার প্রধান কাজ। সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করাতেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনীও আছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক বনে গেছেন। পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। সুমন স্ত্রীর মাধ্যম প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন, যা নরসিংদীর অনেক মানুষ জানেন। তবে তারা ভয়ে প্রতিবাদ করতেন না।
পাপিয়ার ঘটনার তদন্ত করছে, এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার নগদ টাকার পরিমাণ কত, তা তিনি নিজেই জানেন না। ১০ থেকে ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তার। এসব অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
নরসিংদীতে পাপিয়ার ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ এ গাড়ি সার্ভিসিংয়ের আড়ালে মাদক ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা হয়। জেলা শহরের বাইরে গেলে নিজস্ব ক্যাডার বহিনী তাকে বিশাল গাড়িবহরের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও।
ঢাকা/মাকসুদ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম