ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২ ১৪৩১

রেস্টুরেন্টের পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিতে নীতিমালা করার নির্দেশ

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রেস্টুরেন্টের পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিতে নীতিমালা করার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ক্যাফের পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ এ রিটের অন্য বিবাদীদের নিয়ে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বিদেশি ও স্থানীয় উষ্ণ পানীয় (চা-কফি) পরিবেশনের এ  নীতিমালা করতে হবে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২২ অক্টোবর তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক  শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট রুলসহ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রুলে ২০১৪ সালের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আইন অনুসারে জেলা প্রশাসক এবং ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে গ্লোরিয়া জিনস নিয়মিত পরিদর্শন ও প্রয়োজন হলে তদন্ত না করার ব্যর্থতা (যার কারণে পিটিশনার সিহিনথা সাবিন খান শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ) কেন বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পানীয় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিহিনথা সাবিন খানকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে নাভানা ফুডস লিমিটেডকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম,অ্যাডভোকেট জুবায়দা গুলশান আরা,ব্যারিস্টার মুনিজা কবির, ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমেদ ও ব্যারিস্টার জারিফ মোহাম্মদ জুবায়ের।

পরে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, এই আদেশের ফলে সংশ্লিষ্টরা একটি কমিটি করবে। ওই কমিটি হোটেল-রেস্তোরাঁ-ক্যাফেগুলোতে তদন্ত চালিয়ে কি পরিমাণ তাপমাত্রায় উষ্ণ পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে, সেখানে কোনো ধরনের কাপ ব্যবহার হচ্ছে এবং সেসব কাপের সুরক্ষা ও মান নির্ণয় এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিনা- তা নির্ণয় করবে।    

মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, গ্লোরিয়া জিনস ক্যাফে নামে ঢাকায় নাভানা ফুডস লিমিটেডের ৪টি আউটলেট রয়েছে। গত বছরের মে মাসে সিহিনথা সাবিন খান নামের একজন ক্রেতা গুলশানের গ্লোরিয়া জিনস ক্যাফেতে দুপুরের খাবার শেষে ক্যাফেটির একটি চায়ের কাপ নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। তবে গাড়ি ছাড়ার আগে কাপটি হাতে নিলে কাপের মুখটি জাম্প করে খুলে যায়। চা অতিরিক্ত গরম হওয়ায় সিহিনথার পেট ও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। তিনি দৌড়ে ক্যাফটিতে যান। তবে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ।

তবে ঘটনার কিছু সময় পর বাবা-মা এসে সিহিনথাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সিহিনথার পোড়া ছিল থার্ড ডিগ্রি টাইপের। এ ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রে চায়ের তাপমাত্রা তীব্রতর হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ওই ক্যাফের চায়ের তাপমাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা।

ব্যাংকক গিয়ে প্রতি মাসে সিহিনথাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যদিও ঢাকনাযুক্ত ত্রুটিপূর্ণ চায়ের কাপ ও চায়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত না থাকার বিষয়টি ক্যাফে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেনি। ওই ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা দিতে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকবার আলোচনা হলেও ক্যাফের মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি।

রিটকারীর আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, বিধান অনুসারে জেলা প্রশাসক স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁর লাইসেন্স দিতে ও বাতিল করতে পারেন। আবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনেও এর অধিদফতরকে হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিদর্শন ও ভোক্তাদের অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়ে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিটকারী সিহিনথার অভিযোগের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাই প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুলাই ২০১৯/মেহেদী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়