সিনহা হত্যা মামলা: চাঞ্চল্যকর অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র্যাব
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (ফাইল ফটো)
কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র্যাব। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না কি দুর্ঘটনা, সাবেক ওসি প্রদীপ দাশ না কি এসপির নির্দেশে গুলি করেন লিয়াকত, এসব তথ্য জানতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সিনহার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনও খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তারা।
শনিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। তবে এতটুকু বলতে পারি, আমরা চাঞ্চল্যকর অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।’
মুঠোফোনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রিমান্ডে আসামিদের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা সেদিনের ঘটনার বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাত জানিয়েছেন, চেকপোস্টে সিনহা গাড়ি থেকে নামেন। তার পিস্তলটি গাড়িতেই ছিল। অবশ্য ঘটনার পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দাবি করেছিলেন, সিনহা পিস্তল তাক করার পরেই পুলিশ গুলি করে। পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। কেননা, ঘটনার পর সিনহার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। যা নীলিমা রিসোর্ট থেকে পুলিশ জব্দ করে। এসব থেকে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে। সেখানে কী ধরনের ডকুমেন্ট ছিল, তা হয়তো সন্দেহভাজন হত্যাকারীরা জানতেন।
ঘটনার পর টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি করার আগে লিয়াকত ওসি না অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে এখন তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার পর ১৫ দিন পার হলেও এখনো প্রধান সন্দেহভাজন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ফাঁড়ি ইনচার্জ লিয়াকত ও এসআই দুলাল মিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মূলত যে সাতজন রিমান্ডে আছে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পরেই এ তিনজনকে রিমান্ডে আনা হবে। ইতোমধ্যে তাদের দেওয়া তথ্যে সংশ্লিষ্টরা ঘটনার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সিনহার ধারণ করা তথ্যচিত্রে পুরো টেকনাফের মাদক ব্যবসার চিত্র উঠে আসে। তথ্যচিত্রের জন্য ওসি প্রদীপের বক্তব্য নিতে হয় সিনহাকে। নিজের গোমড় ফাঁস হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে সিনহাকে হত্যা করা হতে পারে।
প্রসঙ্গ, ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। এতে প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/রফিক