ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

গোল্ডেন মনিরের ৫৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৩ নভেম্বর ২০২০  
গোল্ডেন মনিরের ৫৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান

রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে বিপুল অর্থ, অস্ত্র-মদ ও সোনাসহ গ্রেপ্তার গোল্ডেন মনির হোসেনের ৫৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বেশ কিছুদিন আগে থেকেই চলমান প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলাও করেছিল দুদক। ওই মামলায় মনির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। যার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। 

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, মনিরের বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান শেষ করা হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মনির হোসেনের তিন কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। র‌্যাবের অভিযানে জব্দ করা টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণলংকার ও গাড়িসহ ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ২৭ হাজার টাকার সম্পদেরও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ৪৯ কোটি দুই লাখ ২৫ হাজার ৬০০ টাকার সম্পদে সপক্ষে মনির হোসেন কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি। এছাড়া মনির হোসেনের স্ত্রী রওশন আক্তারের নামে দুদকের অনুসন্ধানে তিন কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৯৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নোটিশ দেওয়া হবে। 

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা যায়, মনির হোসেনের স্ত্রী রওশন আক্তার একজন গৃহিনী। কিন্তু তার এসব সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তিনি ২০১৬ সালের পরে এসব অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এদিকে র‌্যাব মনির হোসেনের বাসা তল্লাশি করে একটি পিস্তল, চারটি গুলি, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩১টি নকল সিল, ১০ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৫০১ ইউএস ডলার, ৫০০ চায়নিজ ইয়েন, ৫২০ রুপি, এক হাজার সিঙ্গাপুরের ডলার, ২ লাখ ৮০ হাজার জাপানি ইয়েন, ৯২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ১০ দিরহাম, ৬৬০ থাই বাথ জব্দ করেছে। এগুলো মূল্য আট লাখ ২৭ হাজার টাকা। এছাড়া ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ এক কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গোল্ডেন মনিরের বাসার নিচের পার্কিং থেকে বিলাসবহুল দুইটি প্রাডো গাড়ি পাওয়া গেছে। মনির এবং তার পরিবার গাড়ি দুইটি ব্যবহার করত। এছাড়া আরও তিনটি গাড়ি তারা ব্যবহার করতো। এসব গাড়িগুলো কোনো বৈধ কাগজ নেই। পাঁচটি গাড়ির বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে মনিরের আয়কর নথি, রাজউক থেকে পাওয়া দলিল, বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনার কথা জানিয়ে বলা হয়, মনির হোসেনের বৈধ আয়ের উল্লেখযোগ্য কোনো উৎস নেই। দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম এ অনুসন্ধান করছেন।

২০১২ সালের এপ্রিলে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে এক কোটি ৬১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। আদালতে রিটসহ বিভিন্ন জটিলতায় মামলাটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কয়েক জন কর্মকর্তা বদলের পর বর্তমানে দুদকের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন মৃধা এ মামলার তদন্ত করছেন।

মেরুল বাড্ডায় মনিরের ছয়তলা বাড়িতে র‍্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে ২০ নভেম্বর মধ্যরাতে অভিযান চালায়। স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসার সময় গোল্ডেন মনির নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে ২০০১ সালের পর থেকে সে এ ব্যবসা গুটিয়ে আনে এবং জমির ব্যবসার দিকে নজর দেয় মনির।

এসএম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়