২ নারীকে ‘চুক্তিভিত্তিক’ বিয়ে করেন মামুনুল, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা
মামুনুল হক (ফাইল ছবি)
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন প্রথম স্ত্রীর পর আরও দুই নারীকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেছেন। এসব বিয়ের সময় কারা সাক্ষী ছিলেন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাহবুব আলম বলেন, ‘মামুনুল হক রিমান্ডে বিয়েসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রয়েল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়া নারী সম্পর্কে মামুনুল হক বলেছেন, ‘প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ওই বিষয়ে জেনে গেলে অন্যরকম হতে পারতো। এ কারণে ওই সময় জান্নাতকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করি।’ এসব বিয়ের সময় কারা সাক্ষী ছিলেন তাদের তথ্যও দিয়েছেন মামুনুল হক। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, মামুনুল হক রিমান্ডের প্রথম দিনে হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের ঘটনার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।’
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, ‘যে দুই নারীর নাম বেরিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গে মামুনুল হক দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বসবাস করে আসছেন। একইসঙ্গে তার স্ত্রী দাবিকারী এক জান্নাতের নিকটাত্মীয়ের করা জিডির সূত্র ধরে তার কাছে জানতে চাইলে মামুনুল এ সময় মুখ বুজে থাকেন। কোনো উত্তর দেননি। পাশাপাশি ওই দুই নারী ডিভোর্সি হওয়ায় তাদের দিকে মানবিকভাবে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলেও জানিয়েছেন মামুনুল হক। এরমধ্যে একজনকে মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসায় চাকরিও দিয়েছেন।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কাগজপত্র না থাকলে কিভাবে বিয়ে হলো? এমন প্রশ্নে গোয়েন্দাদের মামুনুল হক জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও বিয়ের কাবিন করেননি। আর এ কারণেই কোনো কাবিননামাও নেই। তাদের দিকে মানবিক দৃষ্টি দিয়েছিলেন তিনি। ওই নারীদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। সেভাবেই তাদের সাপোর্ট করে আসছিলেন তিনি।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘‘ইসলাম তো দাঙ্গা, সংঘাত, সহিংসতা ও নাশকতার কথা বলেনি, তাহলে কেন হেফাজতে ইসলাম এগুলো করছে? এমন প্রশ্নে মামুনুল হক বলেন, ‘সংগঠনের নেতা হিসেবে আমার ওপর দায় আসে। হেফাজত ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনও সংঘাতে জড়ায়। আমাদের বেলায় তেমনটি হতে পারে।’ তবে, তিনি এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত কি না, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি।’’
‘২০১৩ সালে হেফাজত ইসলাম তাণ্ডব চালিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ছাড়াও জানমালের ক্ষতি করে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। একইসঙ্গে তাকে হেফাজতে ইসলামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে, মোহাম্মদপুর থানার মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, যখন তাবলিগ জামাতের দুটি গ্রুপ সাদ ও জুবায়ের পন্থী মারামারি হয়েছিল, তিনি সেদিন জুবায়েরপন্থী ছিলেন। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহত হয়েছিল কি না তা তার জানা নেই বলে দাবি করেন মামুনুল হক।
উল্লেখ্য, রোববার (১৮ এপিল) দুপুরে মোহাম্মদপুর রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই তার বিরুদ্ধে একে একে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। মোহাম্মদপুর থানার মারামারি মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঢাকা/মাকসুদ/এনই/