ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৩ ১৪৩১

নিলয় হত্যা মামলার বিচার নিয়ে সংশয়ে স্ত্রী আশামণি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৭ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ০৯:০৫, ৭ আগস্ট ২০২১
নিলয় হত্যা মামলার বিচার নিয়ে সংশয়ে স্ত্রী আশামণি

ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলের স্ত্রী আশামণি বলেন, ‘ভেবেছিলাম ২/১ বছরের মধ্যেই মামলাটির বিচার শেষ হবে। কিন্তু ৬ বছরেও মামলার বিচার হয়নি। এ অবস্থায় কতটুকু বিচার পাবো তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়। নিলয়সহ অন্য ব্লগার হত্যা মামলার বিচারে সবার সহযোগিতা চান আশামণি।’

শুক্রবার (৬ আগস্ট) ফোনে এ প্রতিবেদকের সাথে কথাগুলো বলেন ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলের স্ত্রী আশা মণি।

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় খুন হন ব্লগার নিলয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার ৬ বছরেও শুরু হয়নি। ৫ বছরেরও অধিক সময় পর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে পাঠানো হয়। গত ১০ মার্চ আদালত থেকে চার্জশুনানির তারিখ ৮ এপ্রিল ধার্য করে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বদলি আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় চার্জশুনানি হচ্ছে না।

মামলার বাদী নিলয়ের স্ত্রী আশামণি জানান, ‘এতদিন হয়ে গেলো মামলার বিচার শেষ হলো না। একটা মানুষ চলে গেছে। সে তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু বিচার হলে তো আমরা শান্তি পাবো। যার যায়, শুধু সেই বোঝে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা। বিচারের আশায় আছি। মামলার বিচার হোক, কাঙ্খিত একটা বিচার হোক। শুধু নিলয় হত্যা মামলার নয়, অন্য ব্লগার হত্যা মামলারও বিচার হওয়া উচিত। তরতাজা মানুষগুলোকে কেমনে তারা হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সেদিনের সেই ঘটনার স্মৃতি আমাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। নির্মম, নিষ্ঠুর ওই হত্যাকান্ডের দৃশ্য মনে পড়লে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারি না। শান্ত থাকতে পারি না। এখনো ভয় কাজ করে। কি তিক্ত অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেই ঘটনার মামলার বিচার হচ্ছে না। মামলা স্লো হয়ে গেছে। কতটুকু বিচার পাবো এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকার যেন মামলাটিতে দৃষ্টি দেয়। মামলাটির বিচার যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হয়।’

আশা মণি বলেন, ‘যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, সেই মা বুঝে সন্তান হারানোর বেদনা। ভয়ে নীলয়ের মা-বাবা বিচারও চাইতে পারছেন না। একজনের বিচার চাইলে গিয়ে যদি আবার আরেকজনকে হারাতে হয়। আর এতদিন লাগে কোনো মামলার বিচার শেষ করতে। ভেবেছিলাম ১/২ বছরেই মামলার বিচার পাবো। ৬ বছর হয়ে গেলো। তাও বিচার পেলান না। আমি একা বিচার চাইলে হবে না, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অভিজিৎ হত্যা মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু রায় যদিও কার্যকর হয়নি। কাজেই সব ব্লগার হত্যা বিচার করে অপরাধীদের রায় কার্যকরের দাবি জানান আশামণি।

মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানান, ‘সিএমএম আদালত থেকে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়ে আসে। গত ১০ মার্চ আমাদের আদালত থেকে চার্জশুনানির তারিখ ৮ এপ্রিল ধার্য করে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলিরর আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আদালত খুললে ওই আদালতে চার্জগঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে।’

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নিলয়। বাসাভাড়া নেওয়ার কথা বলে চার যুবক নিলয়ের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী আশামণিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নীলয়কে হত্যা করে।

ওই ঘটনায় ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গত বছর ৪ অক্টোবর মামলাটি তদন্ত শেষে মেজর (বহিষ্কার) সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।

চার্জশিটভূক্ত অপর আসামিরা হলেন-  মো. মাসুম রানা, সাদ আল নাহিন, মো. কাওসার হোসেন খাঁন, মো. কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতী আব্দুল গফ্ফার, মো. মর্তুজা ফয়সলে সাব্বির, মো. তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও  মো. শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।

আসামিদের মধ্যে মেজর জিয়া পলাতক রয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

মামলা সম্পর্কে আসামি মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির ও তারেকুল আলমের আইনজীবী সাঈদ হাসান স্বপন জানান, ‘এ আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত না। সন্ধিগ্ধ আসামি। তারপরও তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি চার্জশুনানির পর্যায়ে আসে। আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করবো। তারপরও যদি চার্জগঠন হয়ে যায় তাহলে ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।’

মাওলানা মুফতি আব্দুল গফফারের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ‘এজাহারে  আব্দুল গফফারের নাম ছিল না। তারপরও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা তার অব্যাহতির আবেদন করবো। অব্যাহতি না পেলে তো বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সাক্ষ্য প্রমাণে তাকে নির্দোষ প্রমাণে সচেষ্ট হবো।’

ঢাকা/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়