ঢাকা     সোমবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৪ ১৪৩১

বেতন ১৩০ টাকা, অথচ ৪০০ কোটি টাকার মালিক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
বেতন ১৩০ টাকা, অথচ ৪০০ কোটি টাকার মালিক

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ছবি: র‌্যাব

কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দৈনিক ১৩০ টাকায় চাকরি শুরু করেন। চাকরির অবস্থানগত কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হয় মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের। টেকনাফ স্থলবন্দর কেন্দ্রিক গড়ে তোলেন বিশাল সিন্ডিকেট।  চাকরি ছেড়ে নুরুল বন্দরে দালালির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।  এ সময় তার কাছ থেকে জাল নোট ৩ লাখ ৪৬,৫০০, মিয়ানমার মুদ্রা ৩,৮০,০০০, ইয়াবা ৪,৪০০ পিস এবং নগদ ২,০১,১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

আরো পড়ুন:

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন

খন্দকার আল মঈন বলেন, নুরুল ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়।  বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে।  সে বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালির সিন্ডিকেটে গড়েতোলে।  ২০০৯ সালে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তারই আস্থাভাজন একজনকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে।  কিন্তু সে দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ রেখে দেয়।  এভাবে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রীক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা।  তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে।  যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল।  সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুটকি মাছ, বরই আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসে।  চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করত।  নুরুলের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের যোগসাজশও আছে।  এছাড়া সে অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় এবং চতুরতার সাথে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করত।  

তিনি বলেন, অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে।  এর মধ্যে, এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম।  ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে তার ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে/বেনামে ৩৭টি জায়গা/প্লট/বাগানবাড়ি/বাড়ি রয়েছে।  তার অবৈধভাবে সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা।  নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে সে জাহাজ শিল্প ও ঢাকার সন্নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছে বলে জানা যায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ  ব্যবসায়ীরাও জিম্মি হয়ে পড়ে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

/মাকসুদ/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়