আবরার হত্যায় ২৫ আসামির কার কী ভূমিকা
মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর শিবিরের তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২২) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রাণে বাঁচতে আকুতি জানায় সে। কিন্ত ঘাতকদের মন গলেনি। নির্মম নিষ্ঠুরতায় থেমে যায় সম্ভবনাময় তরুণের পথচলা। এ মামলার ২৫ আসামির রায়ের তারিখ ২৮ নভেম্বর ধার্য রয়েছে।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাবেন।
এদিকে আবরার হত্যা মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে আবরারকে মারার নির্মম চিত্র তুলে ধরেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তুলে ধরেছেন আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন— অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মনিরুজ্জামান মনির, মুজাহিদুর রহমান, এ এস এম নাজমুস সাদাত, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে- তারা একই উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবরারকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, লাথি মেরে, কনুই দিয়ে পিঠে আঘাত করে, ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
এস এম মাহমুদ সেতুর বিরুদ্ধে ঘটনার তারিখ ও সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একই উদ্দেশ্যে আবরারকে মারার জন্য হুকুম দেওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া মেহেদী হাসান রাসেল, মিজানুর রহমান মিজান, মুহতাসিম ফুয়াদ, আকাশ হোসেন, মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা, মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অর্মত্য ইসলাম, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, অমিত সাহা, ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, মুজতবা রাফিদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামছুল আরেফিন রাফাত এবং মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান ওরফে জিসানের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপর আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন তারিখে মিটিং করে, ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান করে, আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে ঘটনাস্থল ২০১১ নং রুমে নিয়ে তার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন চেক করে শিবির করার মিথ্যা অপবাদ দেওয়া এবং স্ট্যাম্প এনে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে আবরারকে নির্মমভাবে মারধর ও পিটিয়ে হত্যার কাজে সহায়তার কাজ করার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামি মিজানুর রহমানের দেওয়া আবরারের বিরুদ্ধে শিবির করার মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মেহেদী হাসান রবিন বুয়েট শেরে বাংলা আবাসিক হলের ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত SBHSL (১৫+১৬) গ্রুপ নামীয় ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে সব আসামিদের ম্যাসেজ দিয়ে আবরারকে মারধর করে হত্যার সমর্থন আদায় করে। ৪ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর (২০১৯) হলের ক্যান্টিন, গেস্ট রুমে মেহেদী হাসান, মনিরুজ্জামান, মুজতবা রাফিদ, আকাশ হোসেন, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম, ইফতি মোশাররফ, এহতেশামুল রাব্বি, ইশতিয়াক মুন্না, মুজাহিদুর রহমান, অমিত সাহা, মিজানুর রহমানসহ দফায় দফায় মিটিং করে।
মেহেদী হাসান, ইফতি মোশাররফ, মেফতাহুল জিয়নসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে ৬ অক্টোবর রাত ৮টার পর আসামি এহতেশামুল রাব্বি, মুনতাসির আল জেমি, এ এসএম নাজমুস সাদাতসহ কয়েকজন আসামি আবরারের ১০১১ নম্বর রুমে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ল্যাপটপ ও দুইটি মোবাইলসহ ২০১১ নম্বর রুমে আনে।
তারা আবরারকে শিবির করার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নানান তথ্য উপাত্ত বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে। সেসময় উত্তেজিত হয়ে আবরারকে ক্রমাগত চড়-থাপ্পড়, লাথি, কিল-ঘুষি মারে। কনুই দিয়ে পিঠে আঘাত করে। তাদের বিরুদ্ধে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
এজন্য আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ৩০২/১০৯/১১৪/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
ঢাকা/সনি