ঢাকা     বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

জঙ্গি ছিনতাই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ০৮:৫৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জঙ্গি ছিনতাই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে

ঢাকার আদালতের ফটকেই পাহারায় সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপক ধরপাকড়, গোয়েন্দা নজরদারি ও সাড়াশি অভিযানে চলতি বছর কোণঠাসা ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত সব জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড। এই সময় তারা নিজেদের জানান দেওয়ার চেষ্টা করলেও সব ভেস্তে দেয় পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বছরের শেষদিকে এসে নভেম্বরে দিনে-দুপুরে জঙ্গিরা পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে তাদের দুই সহযোগীকে ঢাকার আদালতপাড়া থেকে ছিনিয়ে নেয়। দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এখন পর্যন্ত ওই দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার বা তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব এবং মাঈনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে মেরে তাদের ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশেষ ইউনিট, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চারদিক ঘিরে ফেলে। রেড অ্যালার্ট জারি করে রাজধানীতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, সীমান্ত এলাকায় বিশেষ সর্তকতা জারিসহ সারাদেশে বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। ওইদিনই সরকার ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে ২০ লাখ টাকাও পুরস্কার ঘোষণা করে। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে।

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের হাতে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ মার্কেট নির্মমভাবে খুন হন প্রকাশক ফয়সাল আরফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। ওই মামলায় ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তবে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার পর শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমন দুজন দুর্ধর্ষ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ডান্ডাবেড়ি ছাড়া কীভাবে আদালতে নেওয়া হল, প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল? নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। দায়িত্বে অবহেলা বা খামখেয়ালি করে তাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আদালতে আনা হয়। এসব বিষয় তদন্ত করতে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। তবে এখন পর্যন্ত ওই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
 
দায়িত্ব অবহেলার কারণে ইতোমধ্যে ৪ পুলিশ সদস্যকে এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জঙ্গিরা পরিকল্পনা করেই এ কাজ করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। সেক্ষেত্রে তারা কারাগার থেকে আদালতে আসা পর্যন্ত কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা এগুলোর ইন্ধন দিয়েছে, এর সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা আছে কিনা- তা নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।

আরো পড়ুন:

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ২০১৬ সালে এ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তবে তারা পালিয়ে কোথায় আত্মগোপনে করেছে সে বিষয় নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কারাগারে ও বাইরে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছে কিনা এ বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে খুব শিগগিরই তারা গ্রেপ্তার হতে পারে বলে এ কর্মকর্তা আশা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানের হলি আর্টিজানের ঘটনার পর পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ১৭৩ জন ও সিটিটিসি ৫৫৯ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। যাদের অনেকেই জামিনে রয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে সরকার ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু অদ্যাবধি এ দুজনের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনও সংস্থা নিশ্চিত করে তথ্য জানাতে পারেনি।

কয়েক বছর ধরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সানি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ত্রিশালে ফিল্মি স্টাইলে প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে সালাউদ্দিনসহ জেএমবির তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তার অনুসারীরা। পরে এ ঘটনায় পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি এলিট ফোর্স র‌্যাব অভিযান অব্যাহত রাখে। এরমধ্যে, জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।
 
বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চলতি বছরটি আমরা পুরোপুরি জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু ঢাকার আদালত পাড়ায় থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর জঙ্গিদের তৎপরতা সামনে এসেছে। তবে তারা যে উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনায় ওই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সে পরিকল্পনা কখনো বাস্তবায়ন হতে দেব না। কেননা তারা কোথায়, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের গতিবিধি ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছি। পাশাপাশি পুরো ২০২২ সাল জুড়ে আমরা দুর্ধর্ষ বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এদের অনেকেই এখনো কারাগারে আছে। জঙ্গিরা যেন পুনরায় মাথা ছাড়া দিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এনএইচ/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়