ঢাকা     শনিবার   ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

প্রতারণা: প্রকৌশলী শাহরিয়ারসহ গ্রেপ্তার ৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ২২ মে ২০২৩  
প্রতারণা: প্রকৌশলী শাহরিয়ারসহ গ্রেপ্তার ৬

গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ইসলাম। ছবি: র‌্যাব

প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক প্রকৌশলীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২২ মে) সকালে রাজধানীর  কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেন, রোববার (২১ মে) রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর, কাফরুল ও গাজীপুর সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ‘সিএনএস লি. বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইট হ্যাক করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের হোতা মো. শাহরিয়ার ইসলাম, মো. আজীম হোসেন, মো. শিমুল ভূঁইয়া রুবেল মাহমুদ ফয়সাল আহাম্মদ আনিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উদ্ধার করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিপিইউ, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, পেনড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও অন্যান্য সরঞ্জাম। 

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১০ মে  ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, কোম্পানির মাসিক লেনদেনের বিবরণীর সাথে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের লেনদেন বিবরণী যাচাই-বাচাই শেষে বিআরটিএ এর মোট ৩৮৯টি ট্রানজেকশনের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইটে উক্ত ট্রানজেকশনের পেমেন্ট স্ট্যাটাস পেইড দেখালেও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে  কোন টাকা জমা হয়নি। এর প্রেক্ষিতে ‘সিএনএস লিমিটেড’ র‌্যাব-৪ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইট হ্যাক করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস মিরপুরের একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। যারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি বিষয়ক কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর সাথে ১০-১১ বছর ধরে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বিভিন্ন গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফি বিভিন্ন ব্যাংক এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে বিআরটিএতে হস্তান্তরের মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেনের কাজ করত।

কমান্ডার মঈন বলেন, শাহরিয়ার বিভিন্ন আন-ইথিক্যাল হ্যাকিং ম্যাথড অ্যাপ্লাই করে অভিনব কায়দায় ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ ওয়েবসাইট এর পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করার মাধ্যমে মানি রিসিট প্রস্তুত করত। এভাবে তারা সাধারণ জনগণ থেকে বিভিন্ন গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফিসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ সংগ্রহ করত এবং তাদেরকে অর্থ পরিশোধের মানি রিসিট প্রদান করে। যদিও কোন টাকা সরকারি ফান্ডে জমা হত না। এভাবে তারা প্রতারণার মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা গত ১২ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সফটওয়্যার কর্তৃক নকল কোড ব্যবহার করে তৈরিকৃত সর্বমোট ৩৮৯টি মানি রিসিট প্রস্তুতের মাধ্যমে সরকারি প্রায় এক কোটি বিশ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করেছে বলে জানায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ইতোপূর্বে গত বছরের শেষের দিকে তারা ডেসকো কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাক করে ট্রানজেকশন আইডি তৈরি করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ডেসকো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের ওয়েবসাইটের কিছু পরিবর্তন আনলে পেমেন্ট স্লিপে আনপেইড উল্লেখ থাকায় গ্রাহকরা পুনরায় বিল পেমেন্ট করে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে জানায়, তারা মাঠ পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফিসহ বিভিন্ন কাজের জন নির্ধারিত ফি এবং গাড়ির কাগজপত্র রাজধানীর মিরপুরে ‘মায়ের দোয়া বিজনেস সেন্টার’ ও ‘চাঁদপুর বিজনেস সেন্টার’ কর্তৃক গ্রহণ করত। পরবর্তীতে গাড়ির সব কাগজপত্র স্ক্যান করে হ্যাকিং এর কাজে প্রস্তুতকৃত সফটওয়্যার কর্তৃক নকল কোড ব্যবহার করে তৈরিকৃত মানি রিসিট এর পিডিএফ কপি ফয়সাল ও আনিছুরের কাছে চ্যানেল অনুযায়ী পাঠিয়ে দিত। ফয়সাল ও আনিছুর মানি রিসিট হাতে পাওয়ার পর সেটা গ্রাহককে বুঝিয়ে দিয়ে ক্যাশ টাকা গ্রহণ করত। এরপর গ্রাহক মানি রিসিট দিয়ে বিআরটিএ এর সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন করত।

গ্রেপ্তারকৃত শাহরিয়ার এই প্রতারণা চক্রের হোতা। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোন শেষ না করে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় সে মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং এর পেমেন্ট রেসপন্স কোড সম্পর্কে ধারণা পায়। এক পর্যায়ে সে নিজেই প্রতারণার উদ্দেশ্যে একটি সফ্টওয়্যার তৈরি করে যার মাধ্যমে অভিনব কায়দায় ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ ওয়েবসাইট এর পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করে মানি রিসিট  প্রস্তুত করত। এ প্রক্রিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আজিমের সাথে যোগাযোগ করে এবং আজিমকে সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। সে আজিমকে মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক থেকে অর্থ সংগ্রহ ও উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে ভুয়া মানি রিসিট প্রস্তুত করার সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করে। 

/মাকসুদ/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়