ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

পূর্ব শত্রুতার জেরে মোহাম্মদপুরে আরমানের কব্জি বিচ্ছিন্ন করা হয় : র‌্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:২২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
পূর্ব শত্রুতার জেরে মোহাম্মদপুরে আরমানের কব্জি বিচ্ছিন্ন করা হয় : র‌্যাব

গ্রেপ্তার সাত আসামি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক যুবকের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী সন্ত্রাসী রাফাত, তুষার ও আহমেদসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‌্যাবের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই যুবকের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাদের বাগেরহাট ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

মামলার পর তদন্তে নামে র‌্যাব। গত রাতে র‌্যাব রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন আহমেদ খান (২২), মো. হাসানে ওরফে গুটি হাসান (২৪), মো. হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), মো. রাজুকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। 

পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী সন্ত্রাসী মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩), তুষার হাওলাদারকে (২৩) বাগেরহাট থেকে র‌্যাব-৬ এর একটি দল গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকার করেছে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এই সন্ত্রাসী গ্যাংটি রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে ৪-৫ বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তারা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত।

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গ্রেপ্তার তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে এবং গ্রেপ্তার রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে ভুক্তভোগী আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে বলে জানা যায়। এর আগে, তারা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করতো। এরপর এসব নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিত।

গ্রেপ্তার মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাতের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ৪-৫ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করতো। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো ও এই গ্রুপের প্রধান হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো। এ ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে সে প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পুনরায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় ওই স্থান থেকে আত্মগোপনের উদ্দেশে বাগেরহাট যায়।

গ্রেপ্তার তুষার হাওলাদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে গ্রেপ্তারকৃত রাফাতের নির্দেশ অনুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতো বলে জানা যায়। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যসহ তারা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো। ঘটনার পর সে রাফাতের সঙ্গে আত্মগোপন করে এবং বাগেরহাট থেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মাকসুদ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়