ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

‘উন্নত দেশগুলো বড় বড় কথা বলে, পাচার টাকা ফেরতে সহযোগিতা করে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ৮ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৬:৪৬, ৮ অক্টোবর ২০২৩
‘উন্নত দেশগুলো বড় বড় কথা বলে, পাচার টাকা ফেরতে সহযোগিতা করে না’

‘উন্নত দেশগুলো আমাদের দেশে এসে বড় বড় কথা বলবে। অথচ আমাদের দেশের টাকা তাদের দেশে পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত দিতে সহযোগিতা করে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত। তারা আমাদের টাকা ফেরত দেবে না কেন? হোয়াই নট?’

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারসহ ১৪ আসামির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের আগে পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেন বিচারক।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। তার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা ছিলেন। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র পিকে হালদার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে সম্পদ গড়ার নেশায় মত্ত হন। পিকে হালদার তার মা, আপন ভাইসহ ঘনিষ্ঠজনের সহযোগিতায় অসংখ্য নামী-বেনামী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করে। 

বিচারক বলেন, একজন মেধাবী নাগরিক তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতি গঠনে যেমন ভূমিকা রাখতে পারে, ঠিক অপর দিকে অপরাধ চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়লে তখন সে জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ ব্যক্তিস্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। প্রশান্ত কুমার হালদারের কাছে দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ অনেক বড় ছিল। আমরা যেন নিজের সামান্য ব্যক্তিস্বার্থের জন্য মানি লন্ডারিংদের সহযোগী না হই।

পড়ুন: পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

রায় ঘোষণার সময় বিচারক তার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে বলেন, সরকার পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে পদক্ষেপ নিতে পারে। আমি মামলাটি বিচারের সময় রাষ্ট্রপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পাচারকৃত টাকা ফেরত পাঠাতে যে অনুরোধ করা হয়েছিল তার কোনও আপডেট আছে কি না? কিন্তু এর কোনও আপডেট জানাতে পারেনি। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত। তারা টাকা ফেরত দেবে না কেন? হোয়াই নট? উন্নত দেশগুলো আমাদের দেশে এসে বড় বড় কথা বলবে, অথচ আমাদের দেশের টাকা তাদের দেশে পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত দিতে সহযোগিতা করে না। তারা যদি সহযোগিতা না করে তবে সরকারের একার পক্ষে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। তাদেরও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, বিদেশে যারা অবৈধভাবে সেকেন্ড হোম গড়েছে, তারা আসলে দেশকে ভালোবাসে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে অর্থপাচারকারীদের প্রতিহত করতে হবে। অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারের মতো অর্থপাচারকারীদের কোনও আদর্শ নেই। তারা আদর্শ লালন করে না। তবে তারা অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তাদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। প্রকৃতপক্ষে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে তাদের সমবেতভাবে প্রতিহত করতে হবে। ফলস্বরূপ, অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে কোনোপ্রকার ছাড় পাওয়ার যোগ্য নন।

বিচারক বলেন, এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এখনও মুলতবি রয়েছে। যদিও এটি অনেক আগেই কানাডায় পাঠানো হয়েছিল। উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা ছাড়া কোনও রাষ্ট্র একা অর্থপাচার প্রতিরোধ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতা এবং আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অর্থপাচারের অপরাধ প্রতিহত করা যেতে পারে।

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়