ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

৫০ লাখ নেতাকর্মী বানোয়াট মামলার শিকার: আদালতে আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৩ নভেম্বর ২০২৩  
৫০ লাখ নেতাকর্মী বানোয়াট মামলার শিকার: আদালতে আমীর খসরু

‘মাননীয় আদালত, ডিকশনারিতে গায়েবি মামলা নামে একটা শব্দ যুক্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া এসব গায়েবি মামলা, বিশ্বের কোনো দেশে এ শব্দটা ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না। আজকের মামলাটা প্রথম না, শত শত, হাজার হাজার রয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মী বানোয়াট, গায়েবি মামলার শিকার। আর এ মামলার পিছনে উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া।’

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবীর আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমির খসরু আরও বলেন, মাননীয় আদালত আমার বলতে বাধা নেই, এটা একটা প্রথমত বানোয়াট তথা গায়েবি মামলা। তখন বিচারক জানতে চান, আপনার?

তখন আমির খসরু বলেন, শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। আজকের মামলাটা প্রথম না, শত শত হাজার হাজার রয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মী বানোয়াট, গায়েবি মামলার শিকার। আর এসব মামলার পিছনে উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া। বাংলাদেশের মানুষ যেন ভোট প্রয়োগ করতে না পারে। এই অবৈধ, দখলদার, অনির্বাচিত সরকার যেন আবারও ক্ষমতা দখল করতে পারে। সেজন্য পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, মাননীয় আদালত, আপনাকে বুঝতে হবে যেখানে লাখ লাখ জনতার সমর্থন আছে, সেখানে আমরা কেন সহিংসতা করবো। সহিংসতা তারা করবে যাদের সাথে জনগণ নেই। যারা ডিসকানেক্টেড ফ্রম দ্যা পিপল। তারা সহিংসতা করে টিকে থাকতে চায়। আমাদের তো সহিংসতার দরকার নেই। প্রতিটি মিটিংয়ে লাখ লাখ লোক সমবেত হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কেউ নদী সাঁতরে, কেউ সাইকেল চালিয়ে আবার কেউ ১০০ মাইল হেঁটে। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, হামলা, মামলা, গুম, খুন উপেক্ষা করে লক্ষ জনতা আমাদের সাথে আসছে ভোটাধিকার ফিরে পেতে। গণতন্ত্র ফিরে পেতে তারা সংগ্রামে নেমেছে। তাহলে আমরা কেন সহিংসতা করবো। তারাই করবে যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায়। কারণ সহিংসতা করে তাদের টিকে থাকতে হবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে মাননীয় আদালত, তারা সেগুলো করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। এ কাজগুলো করতে সরকার তাদের বাধ্য করছে। অনেকে বাধ্য হয়ে, নিরুপায় হয়ে এই কাজগুলো করছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বলতে দ্বিধা নেই, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত যারা; যাদের বিবেক আছে তারাও বাধ্য হয়ে এই কাজগুলো করছে।

তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বক্তব্যের বিরোধীতা করা হয়। তারা বলেন, এগুলো মামলার বাইরে কথা হচ্ছে।

আমির খসরুর আইনজীবীরা বলেন, তিনি তো আদালতের অনুমতি নিয়েই বলছেন।

তখন আমির খসরু আইনজীবীদের চুপ করিয়ে দিয়ে বলেন, কেউ যদি প্রেক্ষাপট না বোঝে তবে এ সমস্ত কথা বলবেই। আমি যা বলছি তা পুরোপুরি মামলার সাথে যুক্ত। মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আজকের জনগণ যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছে, তাদের কন্ঠরোধ করা। আপনি চিন্তা করেন, যেখানে একটি মিটিংয়ে ২০ লাখ, ৩০ লাখ লোক হয় সেখানে কোথায় কখন, কি ঘটেছে। কত কি ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে প্রতিদিন। তাদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এক লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, ১০ হাজার  কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকায় হচ্ছে, ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে, শেয়ারবাজার ধসে যাচ্ছে তাতে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে মানুষ দুই বেলা খেতে পারছে না। এটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। পরে তিনি বেঞ্চে এসে পড়েন। এরপর আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে আমীর খসরুকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় বেলা পৌনে ৩ টার দিকে আমির খসরুকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
বিকেল ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়। সেখানে গিয়ে বেঞ্চে বসে আইনজীবীদের সাথে কথাবার্তা বলেন আমির খসরু। বিকেল পৌনে ৪ টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে তারা অনুমতি নেয়। কিন্তু তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই আসামিসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশনায় তারা এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।

আমির খসরুর পক্ষে মহসিন মিয়া, সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
মহসিন মিয়া বলেন, পুলিশ মহাসমাবেশের অনুমতি দেয়। এর এক মাস দেড় মাস আগে থেকে বিএনপি বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে আসছে। এখন মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে সরকারের মহাসমস্যা। তাই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। কারণ শান্তি সমাবেশ হলে দেশ-বিদেশ আমাদের যে সমর্থন দিচ্ছিল তা সরকারের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা সমাবেশে হামলা করে তা পন্ড করেছে। আর পুলিশ সাজানো গোছানো বক্তব্য দিয়ে মামলা করেছে। যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এক তরফা নির্বাচন করতে সরকার এই পরিকল্পনা করেছে। রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করেন তিনি।

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ঘটনার সময় তিনি ছিলেন মঞ্চে। আর ঘটনা ঘটেছে এক কিলোমিটার দূরে। তিনি কিভাবে মামলায় সম্পৃক্ত হবেন। সরকার পূর্ব পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়ে মামলা দিয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ৭৫ বছর বয়স্ক একজন মানুষ। এছাড়া অসুস্থ। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজে কিছু বলতে চান। আদালত অনুমতি দেন। পরে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো আদালতকে জানান।

মামুন/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়