ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ইউনাইটেডে শিশুর মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ ‘চিকিৎসায় অবহেলা’ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ৯ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৭:২৩, ৯ জানুয়ারি ২০২৪
ইউনাইটেডে শিশুর মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ ‘চিকিৎসায় অবহেলা’ 

রাজধানীর বাড্ডা সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে গিয়ে, ফুল অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে রোগীর জ্ঞান না ফেরায় শিশু রোগী আয়ানকে (৬) গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সাত দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টে শিশু আয়ানের পরিবারের পক্ষে এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় যথাযথ তদন্ত, এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং এ ঘটনায় জড়িত ডাক্তারদের সনদ বাতিল চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আয়ানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুল ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করানোর জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে রোগীর পরিবারের কারও অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নতে খৎনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি আয়ানের।

আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, আয়ানের সুন্নতে খৎনার সময় অপারেশন থিয়েটারে ওই মেডিক্যাল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের পর আমার ছেলের জ্ঞান না ফেরার কারণে, অবস্থা বেগতিক দেখে সাঁতারকুল ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও আয়ান মারা যাওয়ার পর প্রায় ছয় লাখ টাকা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শিশু আয়ানের চাচা জামিল খান বলেন, আয়ান যদি দুনিয়াতে থাকতো, তবে পুরো প্রায় ৬ লাখ টাকাই নিতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখনো তারা আমাদের কাছে এই বিলটাই চাচ্ছে। যদিও তারা বলেছেন, বিলটা পরে গিয়ে পরিশোধ করে দিতে।

আয়ানের দাদা আব্দুস সালাম বলেন, খৎনার কাজটি করেছেন ডাক্তার মেহেরজাবিন। অ্যানেস্থেসিয়া বেশি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। আয়ানকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে এক ঘণ্টা ইন্টার্নদের ক্লাস নেওয়ায় আমার নাতি এভাবে মারা গেলো।

আয়ানের মামা রাসেল বলেন, ডাক্তার কী ওষুধ ব্যবহার করেছেন, সেসব কিছু ফাইলে লিখা আছে। ফাইলটা গুলশানের ইউনাইটেডে আমরা নিয়ে এসেছি। এখন ফাইলটা ফেরত চাইলে ওরা বলছে, ফাইলটা পাওয়া যাচ্ছে না। ওরা আয়ানের চিকিৎসার ফাইল গায়েব করে ফেলেছে।

এ ব্যাপারে আয়ানের পরিবারের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার আরিফুল হক বলেন, শিশু আয়ানের মৃত্যুটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওর চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি হয়েছে কি না, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া ঠিক না-বেঠিক হয়েছে এসব বিষয়ে জানার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

প্রায় ছয় লাখ টাকা বিলের ব্যাপারে আরিফুল হক বলেন, সাত দিন পিআইসিইউকে থাকার কারণে এত টাকা বিল এসেছে। তাছাড়া শিশুটি মারা যাবার পর আমরা হাসপাতালের তরফ থেকে তার পরিবারের কাছে বিলের জন্য কোনও তাগাদা দিইনি। আমরা শিশুটির চিকিৎসায় সব ধরনের চেষ্টা করেছি। 

এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

মেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়