ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

খৎনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু: মামলা করলেন বাবা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৩, ৯ জানুয়ারি ২০২৪  
খৎনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু: মামলা করলেন বাবা

আয়ান আহমেদ (ছবি: সংগৃহীত)

রাজধানীর সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিশুটির বাবা মো. শামীম আহামেদ বাদী হয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানায় এ মামলা করেন। 

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) রাতে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন গাজী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন আয়ানের বাবা। মামলায় ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ও পরিচালকসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছে। 

মামলার আসামিরা হলেন এনেস্থেসিয়া স্পেশালিস্ট ডা. সাইদ সাব্বির আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাসনুভা মাহজাবিন এবং ইউনাইটেড মেডিক্যালের পারিচালক এবং অন্য চিকিৎসক-কর্মচারীরা।

মামলায় বলা হয়, আমার ছেলে আয়ান আহমেদ। তার বয়স ৫ বছর ৯ মাস। গত ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আয়ান আহমেদের সুন্নতে খৎনা করানোর জন্য সাতারকুলের মাদানী এভিনিউ রোডে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে যাই। হাসপাতালের নিয়ম অনুসারে ভিজিট দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় ডা. তাসনুভা মাহজাবিনের রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে প্রবেশ করে সুন্নতে খৎনা করানোর বিষয়ে আলোচনা করি। তখন তিনি আমার ছেলেকে দেখে বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে সুন্নতে খৎনা করাই। সুন্নতে খৎনার আগে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে বাচ্চার ১০-১৫ মিনিট ঘুম-ঘুম ভাব থাকে। এ সময়ের মধ্যেই আমরা খৎনা করি। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। এনেস্থেসিয়া স্পেশালিস্ট ডা. সাইদ সাব্বির আহম্মেদ ও ডা. তাসনুভা মাহজাবিন আমার ছেলের শারীরিক পরীক্ষার জন্য কিছু টেস্ট দেন এবং ওই টেস্ট গুলোর রিপোর্টসহ ৩১ ডিসেম্বর সকালে আমাকে যেতে বলেন। টেস্টগুলো করে ৩১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে যাই। পরে ডা. তাসনুভা মাহজাবিনকে আমার ছেলের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো দেখাই। তিনি রিপোর্টগুলো দেখে রিপোর্ট ভালো আছে বলে জানান। পরে ডাক্তার সাব্বির ও তাসনুভা ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় নার্সদের সহযোগিতায় আমার ছেলে আয়ান আহমেদকে ওটি রুমে (অপারেশন রুম) রুমে নিয়ে যায়। এরইমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জন ইনটার্ন ডাক্তার ওটি ড্রেস পরে ওটি রুমে প্রবেশ করে। আমি তাদের ওটি রুমে প্রবেশ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে ডাক্তার তাসনুভা মাহজাবিন স্যারের ক্লাস আছে। ২০/২৫ মিনিট পরে আমি জিজ্ঞাসা করলে আরও কিছু সময় লাগবে বলে সময় পার করতে থাকে। এক ঘণ্টা পরে ইনটার্ন ডাক্তাররা দ্রুত রুমে থেকে বের হয়ে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পর আরও সময় লাগবে বলে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। দেড় ঘণ্টা পর হাসপাতালের বিভিন্ন ডাক্তার উদ্বিগ্নভাবে ওটি রুমে প্রবেশ করে এবং বের হতে থাকে, তখন আমরা বুঝতে পারি যে, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। তখন আমি জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি যে, ডাক্তাররা আমার ছেলের বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছে এবং আমার অনুমতি ছাড়াই তারা আমার ছেলের বুকের দুই পাশে ফুটা করে টিউব স্থাপন করে। এর পরেও কোনো কাজ না হওয়ায় তারা তাদের নিজেস্ব ব্যবস্থাপনায় আমার ছেলেকে দ্রুত গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের নিয়ে যায়। তখন আমি আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও তারা আমার কথা না শুনে ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমার ছেলেকে লাইফ সাপোর্টে রাখে তারা। আমি ৩১ ডিসেম্বর রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে প্রবেশ করে আমার ছেলের দেহ শীতল ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। হাসপাতালের প্রতি আমাদের অনাস্থা বাড়তে থাকলে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত না করে জোর করে তাদের হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়। আসামিদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়। 

মাকসুদ/রফিক 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়