ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

ডিবির চার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪  
ডিবির চার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই

হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাভার কার্যালয়ের চার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমানের আদালতে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) মামলাটি করেছেন শ্যামলী হালদার রুপা নামের এক নারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জানা গেছে, আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বাদীপক্ষের আইনজীবী সুমন কুমরা রায় এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন—সাভার ডিবি কার্যালয়ের অফিসার ইনচার্জ ইয়াসিন মুন্সি, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) কামাল হোসেন, একই কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক মো. শেখ ফরিদ ও মো. রাজীব হোসেন। 

ঢাকার ধামরাই থানাধীন বারবাড়ীয়া গ্রামের দীনেশ চন্দ্র হালদারের মেয়ে শ্যামলী মামলায় অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১টা থেকে ২টার দিকে তিনি শাশুড়ির ডাক-চিৎকার শুনে দরজা খুলে বের হন। ওই সময় তার শাশুড়ি জানান, প্রায় ১৪ ভরি স্বর্ণ ও বাড়ি নির্মাণের জন্য রক্ষিত নগদ ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।

বাদীর স্বামী রাত আনুমানিক সোয়া ২টায় ফোন পেয়ে ভোর ৫টায় বাড়িতে পৌঁছান। তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করলে ধামরাই থানা পুলিশ এসে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে চলে যায়। ওই দিন ধামরাই থানায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবি অফিস থেকে আসামি শেখ ফরিদ বাদীর দেবর শ্যামলকে ফোন করেন। পরদিন সকাল ১০টায় বাদীকে তার ছেলে দিগন্ত এবং দেবর কীর্তন হালদারকে নিয়ে ডিবি অফিসে যেতে বলা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর সেখানে যাওয়ার পর আসামিরা সাদা কাগজে ডাকাতির আগে সারা দিনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা লিখতে বলেন। বাদী তা লিখে দিলে, আসামিরা বাদীকে বলেন, তুই ঘটনার দিন মানিকগঞ্জে ছিলি। বাদী বার বার বলেন, ‘আমি মানিকগঞ্জে যাইনি। আমাদের যৌথ পরিবার। আমাদের বাড়ির লোকজনের কাছে  জিজ্ঞাসা করলে সত্যতা পাবেন।’ তখন আসামিরা বলেন, ‘বল, ডাকাতি তুই করেছিস’। বাদী ‘না’ বললে আসামি ইয়াসিন মুন্সি অশ্লীল ভাষায় গালি দেন এবং মোটা লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে পেটাতে বলেন, ‘স্বীকার করবি কি না, বল। না হলে তোকে এখানে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে।’ তখন রাজিব নামের এক এসআই বলে, ‘এই বেটির ছেলেকে উল্টো করে বেঁধে পিটা, গায়ে গরম পানি দে।’ এসআই শেখ ফরিদ এর পর বাদীর ছেলে দিগন্তকে তার সামনে নিয়ে এসে বেধড়কভাবে লাঠি দিয়ে পেটান। ছেলের ওপর অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাদী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের শেখানো মতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। এভাবে সাভার ডিবি কার্যালয়ে ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর বাদী ও তার দেবর কীর্তন হালদারকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। 

এছাড়া, আসামিরা বাদীকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার ব্যবহৃত দুটি চেইন, একটি আংটি, এক জোড়া কানের দুল নিয়ে নেন। এর পরও মামলা শেষ করার জন্য আসামি শেখ ফরিদ ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এছাড়া, বাদীর মাসতুতো ভাই কীর্তন হালদারকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে দেওয়া হলে কয়েকটি সাদা কাগজে বাদী, তার শ্বশুর, স্বামী ও দেবর শ্যামল মালোর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। বাদীকে ছেড়ে দেওয়ার সময় আসামিরা একটি ভিডিও ধারণ করে বলেন, ‘আপনি বলেন, ডিবি কার্যালয়ে আমাকে চার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রাখা হয়নি। প্রতিদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমাকে কেউ মারধর করেনি।’ টাকা নেওয়ার পরও কীর্তন হালদারকে ছেড়ে না দিয়ে জোরপূর্বক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে হাজতে পাঠানো হয়। বাদীর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১২ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ১ বছর চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে মামলা করেন শ্যামলী।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়