ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

চোরাই মোবাইল কেনাকে কেন্দ্র করে পিয়াস খুন: র‌্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১১ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৪:৩৪, ১১ মার্চ ২০২৪
চোরাই মোবাইল কেনাকে কেন্দ্র করে পিয়াস খুন: র‌্যাব

গ্রেপ্তার ৩ জন

রাজধানীর উত্তর মুগদায় কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূরকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। চোরাই মোবাইল কেনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সোমবার (১১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোববার (১০ মাচ) রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত খালিদ হাসান, আরিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ছুরি উদ্ধার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪৩০০ টাকা বাকিতে ১টি চোরাই মোবাইল ফোন ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত মোবাইলের টাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও মাহির আর্থিক সমস্যার কারণে তা পরিশোধ করতে পারেনি। যথা সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরবর্তীতে ৭ মার্চ সন্ধ্যায় অনিক গ্রেপ্তারকৃত খালিদ, আরিফ, মিরাজ ও উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামি অর্নব এবং রাব্বীকে নিয়ে মোবাইল বিক্রির বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যায়। তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে মাহিরের মায়ের কাছে মোবাইল বিক্রির পাওনা টাকা দাবি করে এবং অশোভনীয় আচরণ করে।

তিনি বলেন, সেখানে মাহিরের মা একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে মাহির বাড়িতে এসে তার মায়ের কাছে ঘটনা জানতে পারে। বিষয়টি মাহির তার বন্ধু নিহত পিয়াস ও শামীমকে জানায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সাথে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করে। এ সময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই তুকারি সম্বোধন করে। পরবর্তীতে একই দিন রাত সাড়ে ১০টায় পিয়াস অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এনজেল স্কুলের গলি পুনরায় আসতে বলে। অনিক সেখানে পোঁছালে পিয়াস এবং শামীম অনিকের কাছে কেন সে তাদের তুই তুকারি সম্বোধন করেছিল তার ব্যাখ্যা চায়। পূর্ব থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক নিহত পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের ফোন করে সেখানে আসতে বলে। অনিকের ফোন পেয়ে অনিকের বন্ধু গ্রেপ্তারকৃত খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং গ্রেপ্তারকৃত খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে খেলার স্টিক নিয়ে আসে। এ সময় তারা স্টিক ও লাঠি দিয়ে পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে রাব্বী একটি দোকান থেকে আচমকা জোর পূর্বক একটি নতুন ধারালো ছুরি নিয়ে পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়।

র‌্যাব জানায়, পিয়াস মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ অন্যান্যরা পুনরায় এলোপাতাড়িভাবে স্টিক ও লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত পিয়াসকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত খালিদ স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। পরবর্তীতে সে তার বাবার সাথে অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সহযোগিতা করতো। সে উত্তর মুগদা এলাকায় ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপ এর সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অলি-গলিতে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। সে ইতোপূর্বে রাজধানীর মুগদা থানায় সড়ক পরিবহন আইন মামলায় ১ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয় বলে জানায়। এছাড়াও সে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলায় ১৫ দিন কারাভোগ করেছে। মিরাজ স্থানীয় একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সে মামলার আসামি রাব্বীর অন্যতম সহযোগী এবং ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপ এর সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। সে উক্ত হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার হয়। আরিফ এইচএসসি পাস করে স্থানীয় এলাকায় একটি ইন্টারনেট অফিসে কাজ করতো। 

/মাকসুদ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়