এমপি আনার হত্যা
ঢাকায় ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশ
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্ত করতে বাংলাদেশে এসেছে কলকাতার তদন্তসংশ্লিষ্ট চার সদস্যের স্পেশাল টিম। এই মুহূর্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তারা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা ডিবি কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ছাড়া, তারা কলকাতায় যে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের তথ্য বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সঙ্গে শেয়ার করছেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, কলকাতায় গ্রেপ্তার দুই জন এবং বাংলাদেশের গ্রেপ্তার তিন জনের তথ্য চার সদস্যের স্পেশাল টিম ক্রস চেক করে দেখছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ যারা এই মামলার তদন্ত করছেন, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করছে।
সূত্রের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো অফিসার অন্তু কুমার ও জয়দীপসহ চার জন ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি কার্যালয়ে আছেন। তারা গ্রেপ্তার অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করছে। তারা আরও এক থেকে দেড় ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে থাকবেন বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।
পরে বুধবার (২২ মে) ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। এনডিটিভি বলে, ১১ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর বুধবার সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এরপর, বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এমপি আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আটক তিন জন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজিম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।
মাকসুদ/এনএইচ