ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

লঞ্চডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যু: ৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৯ জুন ২০২৪  
লঞ্চডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যু: ৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

লঞ্চডুবিতে মারা যাওয়া ৩৪ জনই ছিলেন মর্নিং বার্ডের যাত্রী (ফাইল ফটো)

২০২০ সালের ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করে নৌ-পুলিশ। মামলা তদন্ত করে ২০২২ সালে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। 

এ মামলা এখন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ শেখ হেলাল উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। আসামিদের সাফাই সাক্ষ্যের জন্য রয়েছে। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। ঘটনার চার বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। 

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলা দ্রুত শেষ করতে প্রথম থেকেই আমরা তৎপর ছিলাম। ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়। আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। তারপর আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।’

মামলার বিচার বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘আসামিপক্ষ মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন। গত তিনটি তারিখে সাফাই সাক্ষ্য দিতে তারা সময় চান। আদালত তাদের সময় মঞ্জুর করেন। সময় না দিলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। এজন্য আদালত তাদের সময় দিচ্ছেন। রাষ্ট্রপক্ষের কাজ অনেকটাই শেষ। আসামিদের জেরা আর যুক্তিতর্ক বাকী আছে রাষ্ট্রপক্ষের।’

তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্যে একটা বিষয় মোটামুটি উঠে এসেছে ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ঘাটে যাওয়ার সময় মর্নি বার্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছে। এ কারণে এতগুলো প্রাণ গেছে।  একজন সাক্ষী আদালতে বলেছে, ময়ূর-২ লঞ্চের সুকানীকে বলেছিল লঞ্চটি সরিয়ে নিতে। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করেনি। মোটামুটি সাক্ষ্যে উঠে এসেছে আসামিদের অপরাধ। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।’

মামলা সম্পর্কে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ ৯ জনের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিও হয়েছে। এখন আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য চলছে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় হবে। যে ঘটনায় মামলা হয়েছে সেই ঘটনায় ৩৪ জন লোক মারা গেছে সত্য। কীভাবে মারা গেছে? দুর্ঘটনায়। কি দুর্ঘটনা? লঞ্চ দুর্ঘটনা। বড় লঞ্চ ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী নাই। বড় লঞ্চ ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়েছে কেউ বলেনি। আর আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন লঞ্চের স্টাফ না। আবার কেউ বলছেন লঞ্চে ছিলেন না। কেউ নারায়ণগঞ্জ ছিলেন। আবার কেউ ছুটিতে ছিলো। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায় ঘোষণা করবেন। আশা করছি, আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো।’ 

২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়।  দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আসামিরা হলেন- ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, সুকানি নাসির হোসেন মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়