ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

স্ত্রীর না‌মে অবৈধ সম্পদ রে‌খেও রক্ষা পাননি রাজউকের মোবারক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ৩ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৬:১৪, ৩ জুলাই ২০২৪
স্ত্রীর না‌মে অবৈধ সম্পদ রে‌খেও রক্ষা পাননি রাজউকের মোবারক

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ-২) দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন মোবারক হোসেন। এর আগে ছি‌লেন প্রতিষ্ঠান‌টির অথরাইজড অফিসার। চাক‌রিকা‌লে ঘুষ-দুর্নী‌তির মাধ‌্যমে বিপুল অং‌কের টাকাসহ অবৈধ সম্পদ গ‌ড়ে‌ছেন তি‌নি। নজ‌রে না পড়‌তে নি‌জের এই অবৈধ সম্পদ রা‌খেন স্ত্রী সাহানা পারভীনের নামে। শেষমেশ রক্ষা হয়‌নি তার। রাজউক কর্মকর্তা মোবা‌রক ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য বে‌রি‌য়ে আসে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশ‌নের অনুসন্ধা‌নে।

সরকা‌রি চাক‌রিজীবী স্বামী মোবার‌কের চে‌য়ে গৃ‌হিণী সাহানার ভোগদখ‌লে অবৈধ সম্পদ অনেক বে‌শি। যেখা‌নে স্বামীর ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫ টাকা মূল্যের অবৈধ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, সেখা‌নে বেকার স্ত্রীর না‌মে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের সম্পদ ভোগদখলে রাখার সত্যতা পাওয়া যায়। মূলত স্ত্রীর এত অবৈধ সম্প‌দের উৎস রাজউক কর্তা স্বামীর বদান্যতায় হ‌য়ে‌ছে ব‌লেও দুদ‌কের অনুসন্ধা‌নে প্রমাণ মি‌লে‌ছে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রায় দুই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ-২) মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী সাহানা পারভীনের নামে পৃথক দুটি মামলা দা‌য়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ কমিশনের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা দু‌টি দায়ের করেন। বুধবার (৩ জুলাই) দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাজউকের পরিচালক মোবারক হোসেনের বিরু‌দ্ধে দা‌য়েরকৃত মামলা এজাহা‌রে বলা হয়, আসা‌মি মোবারক হোসেনের দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজের নামে স্থাবর ও অস্থাবরসহ মোট এক কোটি ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৩ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য থাকার বিবরণ দিয়েছেন। যাচাইকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় করে দাখিল করা সম্পদের সত্যতা পাওয়া যায়। এ সম্পদের বিপরীতে চাকরিকালীন বিভিন্ন খাত হতে আয় থেকে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ব্যতিরেকে সঞ্চয় ও ঋণগ্রহণসহ মোট বৈধ উৎসের পরিমাণ পাওয়া যায় ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার ২০৮ টাকা। এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বৈধ উৎসের চেয়ে অতিরিক্ত ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫ টাকা আয়ের কোনও বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস তিনি প্রদর্শন করতে পারেননি।

অর্থাৎ, আসামি মো. মোবারক হোসেনের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে, মো. মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাহানা পারভীন নামে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি নিজ নামে ৬০ লাখ ৯০ হাজার ৫৬০ টাকা মূল্যের স্থাবর এক কোটি ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭০১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যসহ মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার ২৬১ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য দাখিল করেছেন। তবে, সাহানা পারভীনের নামে বর্ণিত সময়ে আয় থেকে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে নীট সঞ্চয়সহ অন্যান্য বৈধ প্রাপ্তিসহ বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৪১ লাখ ২ হাজার ১০৯ টাকা। এক্ষেত্রে আসামি সাহানা পারভীনের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ভোগ দখলে রাখার সত্যতা পাওয়া যায়।

এতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে সাহানা পারভীন স্বামী মো. মোবারক হোসেন অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এ সম্পদ অর্জন করেছেন। সুতরাং, আসামি সাহানা পারভীন ও তার স্বামী মো. মোবারক হোসেন পরস্পর যোগসাজশে একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রাখেন। অপরাধলদ্ধ অর্থ দ্বারা উভয়ে একে অন্যের সহায়তায় মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।।
 

নঈমুদ্দীন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়