ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাড়ির অবস্থা জানতে পরিদর্শক নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ৫ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৪, ৫ জুলাই ২০২৪
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাড়ির অবস্থা জানতে পরিদর্শক নিয়োগ

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ছেলে ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও মেয়ে সিমিন ওয়ালীউল্লাহ

ঢাকার গুলশানে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাড়ির প্রকৃত অবস্থা জানতে পরিদর্শক নিয়োগের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আলমগীর আল মামুন গত ৯ এপ্রিল দুই পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। তবে সম্পূর্ণ লিখিত আদেশ পাওয়া যায় বুধবার।

বিচারক আদেশে বলেছেন, এ মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির স্বার্থে ওই বাড়ির প্রকৃত অবস্থা জানা দরকার। সে কারণে একজন আইনজীবীকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হবে এবং তিনি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বাদীপক্ষের আইনজীবী দীপঙ্কর ঘোষ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

জাল দলিলের মাধ্যমে গুলশানে ওয়ালীউল্লাহর জমি-বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন তার ছেলে ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও মেয়ে সিমিন ওয়ালীউল্লাহ।

মামলায় তারা অভিযোগ করেন, ওয়ালীউল্লাহর মৃত্যুর পর ‘ভালোবেসে ও বিশ্বাস করে’ তারই মামাতো ভাই ও পরিবারের ঘনিষ্ঠ কামাল জিয়াউল ইসলামকে (কে জেড ইসলাম) নিজেদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিল তাদের পরিবার। কিন্তু তিনি সেই ‘ভালোবাসার দাম’ দেন সম্পত্তি নিজের ছেলের নামে হস্তান্তর করে।

দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের গুলশানের ওই সম্পত্তির মালিকানা ও দখল বুঝিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয় ফ্রান্স প্রবাসী ইরাজ ও সিমিনের ওই মামলায়। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জমির ওপর যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং সম্পত্তির আকারের পরিবর্তন বা ক্ষতিসাধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

মামলায় তাদের আত্মীয় ও গৃহনির্মাণ ব্যবসায়ী কামাল জিয়াউল ইসলাম, তার স্ত্রী খাদিজা ইসলাম, ছেলে রাইয়ান কামাল ও রাহাত কামাল এবং তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডকে মূল বিবাদী করা হয়।

এছাড়া রাজউক, গৃহায়নও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ (রাজস্ব) ৬ জনকে মোকাবেলা বিবাদী করা হয়।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ওয়ালীউল্লাহ ১৯৭০ সালের ১২ মার্চ গুলশান মডেল টাউনের ১০ নম্বর প্লটের সিইএন (বি), ৯৬ নম্বর সড়কে ১ বিঘা ২ কাঠা জমি এবং তার ওপর দুই তলা ভবন জনৈক মোহাম্মদ আশরাফীর কাছ থেকে হস্তান্তর সূত্রে মালিকানা পান। রাজউকের এই সম্পত্তি ৯৯ বছরের জন্য লিজ সূত্রে মালিক ছিলেন আশরাফী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্যারিসে চাকরিতে থাকাকালে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর মারা যান সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তখন তার স্ত্রী আন-মারি ওয়ালীউল্লাহ (আজিজা নাসরিন) ছিলেন ফরাসি নাগরিক এবং তাদের দুই সন্তান ছিলেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক।

এ অবস্থায় গুলশানের ওই সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য আন-মারি তার স্বামী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মামাত ভাই ও তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ কে জেড ইসলামকে আম-মোক্তারনামা দেন।

পরবর্তীতে তার ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে কে জেড ইসলামের বরাবরে নতুন আরেকটি আম-মোক্তারনামা দেওয়া হয়। সেই সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে কে জেড ইসলাম ওই বাড়িতেই পরিবারসহ থাকতেন। আন-মারি ও তার দুই সন্তান ঢাকায় এলে কে জেড ইসলামের সঙ্গেই ওই বাড়িতে উঠতেন।

১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই আন-মারি মারা যান। তার মৃত্যুর আগেই মায়ের সঙ্গে তার দুই সন্তানও ওই সম্পত্তিতে নাম জারি করে মালিকনাপ্রাপ্ত হন। তখনও আম-মোক্তারনামা সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের চাচা কে জেড ইসলামের কাছেই ছিল।

মামলায় বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল ফ্রান্স থেকে ঢাকায় আসেন ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও সিমিন ওয়ালীউল্লাহ। মৃত মা আন-মারিকে বাদ দিয়ে সম্পত্তিটি নিজেদের নামে নামজারি করার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন তারা।

তবে ঢাকায় এসে তারা ওই বাড়িতে গেলে জনতে পারেন যে, জায়গা ও বাড়িটি কে জেড ইসলাম তার বড় ছেলে রাইয়ান কামালের কাছে আম-মোক্তারনামার শর্ত লঙ্ঘন করে হস্তান্তর করেছেন। তবে সম্পত্তিটি নিজের নামে নামজারি করতে রাজউকে গিয়ে ব্যর্থ হন রাইয়ান কামাল। এরপর রাজউকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেও নামজারির আদেশ পাননি তিনি।

বাদীপক্ষে বলা হয়, মামলা করার সময় কে জেড ইসলাম এবং অন্যরা সেখানে ১৪ তলা ভবন নির্মাণে জন্য বেজমেন্ট নির্মাণ করেছেন। মামলা চলা অবস্থায় এ নির্মাণ বেআইনি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় সম্পত্তির আকার প্রকৃতি পরিবর্তন আইনসঙ্গত নয়।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৫১ ও ৬০ এর দশকে পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ওই বছর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রবাসে থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালান।

/মামুন/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়