ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

দাবার বোর্ড জব্দ করা নিয়ে দ্বন্দ্বে কমার্স কলেজছাত্র খুন: র‌্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৮ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৫:১৮, ৮ জুলাই ২০২৪
দাবার বোর্ড জব্দ করা নিয়ে দ্বন্দ্বে কমার্স কলেজছাত্র খুন: র‌্যাব

জুবায়ের হাসান রাফিত

ক্লাসরুমে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিতকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবাল। রোববার (৭ জুলাই) হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকা থেকে অভিযুক্ত রাজিনকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য জানা যায়।

সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, কলেজ শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারই সহপাঠী রাজিনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসে দাবা খেলার বোর্ড বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজিন জুবায়েরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। কারণ রাজিন সেই দাবার বোর্ড ফিরে পেতে নিয়মিত ছাত্র দাবি করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু তাতে জুবায়ের আপত্তি জানায়, রাজিন নিয়মিত ছাত্র না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং হাতাহাতিও হয়েছিল। সে কারণে জুবায়েরের ওপর তার ক্ষোভ ছিল। ক্ষোভ থেকে জুবায়েরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে রাজিন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় শাহ আলীর ঢাকা কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী চারতলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার একটি ভাড়া বাসায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ পায় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার পলাতক আসামি রাজিনকে গ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় মাঠে নামে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৯। নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হোতা চৌধুরী রাজিন ইকবালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

হত্যার শিকার জুবায়ের ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। এছাড়া জুবায়ের ক্লাসের ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো। গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজিনের কাছে কলেজের শিক্ষক একটি দাবা বোর্ড পায়। পরে সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের উপদেষ্টা বরাবর নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করে দাবা বোর্ডটি ফিরে পেতে আবেদন করে রাজিন। কিন্তু জুবায়ের শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় আবেদনটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে কলেজ শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা করা হয় এবং অভিভাবকদের অবহিত ও সতর্ক করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাজিনের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাজিন জুবায়েরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত শনিবার দুপুরে আসামি রাজিন জুবায়েরকে কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী নিজ ভাড়া বাসায় কৌশলে ডাকে এবং তার ডাকে সাড়া দেয় জুবায়ের। এরপর বিকালে সেখানে পৌঁছালে তাদের মধ্যকার পূর্বের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতার রাজিন জুবায়েরকে ধারালো বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার বিষয়টি রাজিন তার বাবাকে জানালে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানার পূর্বেই রাজিনকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। শেষে লাশটি সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ অবগত হলে রাজিনের বাবাও কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে উভয়েই নির্দিষ্ট একটি স্থানে মিলিত হন। রাজিনের বাবা মাইক্রোবাসে করে ছেলেকে নিয়ে হবিগঞ্জে পালিয়ে গিয়ে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে ছেলেকে রেখে নিজে অন্যত্র আত্মগোপনে চলে যান। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ৬ জুলাই ঢাকা কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী চারতলা বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায় একটি ভাড়া বাসায় একজন কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ পাওয়া যায়। লাশটি পাওয়া গেলে ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। 

/মাকসুদ/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়