‘আ.লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর পেছনে আছেন জিয়াউল আহসানসহ কয়েকজন’
আদালতে নেওয়ার পথে জিয়াউল আহসান
আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর ক্ষেত্রে জিয়াউল আহসানসহ কয়েকজন জড়িত আছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল নামের এক আইনজীবী। তিনি নিজেকে ‘সচেতন আইনজীবী’ হিসেবে দাবি করেছেন। তবে, জানা গেছে যে, মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় জিয়াউল আহসানের রিমান্ড শুনানিতে উল্লিখিত অভিযোগ করেন ওই আইনজীবী।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. সজিব মিয়া জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্তরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও নিধন, আড়িপাতার জন্য পেগাসাস সফটওয়্যার এবং আয়নাঘর কনসেপ্টসহ বহু গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত মর্মে স্বীকার করেছেন জিয়াউল আহসান। শাহজাহান আলী হত্যার রহস্য উদঘাটন, জড়িত অপরাপর আসামি ও অপরাধী চক্রকে শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তার, হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান বলেন, এ আসামি শাহজাহান হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। শুধু এটা না, আরও অনেক হত্যাকাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
শুনানিতে আইনজীবী মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল বলেন, এ আসামি মানুষরূপী অমানুষ। তাকে ঘৃণা করার ভাষা নেই। তিনি আয়নাঘরের অন্যতম কারিগর। মানুষকে ধরে নিয়ে গুমের কালচার সৃষ্টি করেছেন। দেশকে আফগানিস্তান বানিয়েছেন। হাজার হাজার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
জিয়াউল আহসানের পক্ষে তার ছোট বোন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের আইনজীবী যা বললেন, তা পল্টন ময়দানে সুন্দর হয়। আয়নাঘর কি জানি? সারা বিশ্বে আয়নাঘর থাকে। এসব কুকথা মিডিয়া-ফেসবুকের সৃষ্টি। জেলাসের কারণে এ অবস্থা। মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। এ কথা বলা অন্যায়, অযৌক্তিক। মামলার জন্য না। মামলার সাথে যোগসূত্র নেই।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউল আহসান উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাকে খিলক্ষেতে পাওয়ার তথ্য ভুল। তিনি নয় দিন আয়নাঘরে থেকে এসেছেন। মানসিক- শারীরিক টর্চার করা হয়েছে।
পরে মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল বলেন, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হবে। তিনি গণহত্যাকারী। ইলিয়াস আলীসহ কয়েকজন গুমের জন্য তিনি দায়ী। আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর জন্য জিয়াউল আহসানসহ এরকম কয়েকজন আছেন। তারা অন্যতম কারিগর।
এর বিরোধিতা করে নাজনীন নাহার বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, এটা বলা অন্যায়।
মোহাম্মদ উল্লাহ খান বলেন, তিনি কণ্ঠরোধকারী। তাকে ঘৃণা করার ভাষা নেই। দেশে থাকলে তাদের বিচার দেখবেন।
পরে আদালত জিয়াউল আহসানকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) গভীর রাতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন।
মামুন/রফিক