রাজপথে আন্দোলনে করেছি, আবু সাঈদকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছি: রিংকু

তরুণ নাট্যনির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু আদালতকে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহকর্মীদের সাথে রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। আবু সাঈদকে নিয়েও পোস্ট দিয়েছি।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্যাহর আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর গুলশানে নাইমুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় জামিন শুনানিতে এ কথা বলেন রিংকু।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর রাজু আহমেদ তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে।রিংকুর পক্ষে তার আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার কোথাও আসামির বিরুদ্ধে একটা শব্দও নাই, কোনো অভিযোগ নাই।বলা হচ্ছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। গত ১৪/১৫ বছর ধরে নাট্য নির্মাণ, চলচ্চিত্র পরিচালনা করছেন। অনেক কাজ, রানিং, পেন্ডিং। নতুন নির্মাতা হিসেবে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন। ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন এ আইনজীবী।

তিনি আরও বলেন, ভালো কাজ করার কারণে কেউ ষড়যন্ত্র করে তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। হয়রানি করতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টও আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্ট্যাটাস দিছে। তখন বিচারক বলেন, ওটা তো লাস্ট দিন ছিলো।

আইনজীবী বলেন, অনেক কাজ হাতে রয়েছে। জামিন না দিলে বন্ধ হয়ে যাবে। আর জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।

রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে নরপিচাশের মতো গুলি করে হাজারের অধিক লোককে খুন করেছে। আহত বিশ হাজারের অধিক। এ আসামি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আর নির্মাতা, অভিনেতা, নায়ক-নায়িকা রাজনীতির বাইরে না। বিপদে পড়লে বলে রাজনীতিতে জড়িত না।যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার ছবি আছে।সেই ছবি আদালতে দেখানো হয়।জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে।

তখন রিংকুর আইনজীবী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তখন বিচারক বলেন, রিফর রিজাইন না আফটার রিজাইন।

এ সময় ওমর ফারুক তার রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি আবারও আদালতকে জানান। তখন বিচারক বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নানা মত, নানা দল থাকতেই পারে। এটা কোনো অপরাধ না।

এরপর বিচারক রিংকুর বক্তব্য শুনতে চান। রিংকু আদালতকে বলেন, এখানে অনেক নির্মাতা আছেন যাদের সাথে আমি আন্দোলনে ছিলাম। শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনারে ছিলাম। আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী থেকেও লোকজন আন্দোলনে আসে। তাদের দুইজনকে আমার বাসায় আশ্রয় দিয়েছি। রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। ১৮ জুলাই আবু সাঈদতে নিয়েও পোস্ট দিয়েছি।

তখন রিংকুর আইনজীবী বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। যেকোনো শর্তে জামিনের প্রার্থনা করছি।

এরপর আদালত বলেন, যেহেতু আসামি এজাহারনামীয় নয়। তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কি পেয়েছেন তা কেস ডকেটে (সিডি) আছে। সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানি হওয়া পর্যন্ত। আজকে বিষয় নথিভুক্ত করে রাখলাম। আদালত রিংকুকে কারাগারে পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

এ সময় চয়নিকা চৌধুরী, আরশ খান, দীপংকর দীপকসহ তার আরও সহকর্মীরা আদালতে হাজির হন। তারা সুষ্ঠু বিচার এবং রিংকুর জামিন চান।

এর আগে সোমবার রাতে রিংকুকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ।