স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও এপিএসকে নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্পদের পাহাড়
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রীসহ পাঁচজনের নামে পৃথক ৫টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার অপর আসামিরা হলেন— আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান (জ্যোতি), মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান ও আসাদুজ্জামান খানের এপিএস মনির হোসেন। সবকটি মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ এসব মামলা করা হয়। পাঁচটি মামলার বাদীরা হলেন— কমিশনের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সেগুনবাগিচাস্থ প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানান।
আসাদুজ্জামানের নামে মামলা
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আসাদুজ্জামান খান ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রাখেন। এ ছাড়া ৮টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৫৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৬ টাকা লেনদেন করে মানিলন্ডারিং (দুর্নীতি ও ঘুষ) করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কামাল ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মোট ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫৯ টাকা ৫৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সেগুলো হচ্ছে- ১৩৬, মনিপুরিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকায় ৩.৩ কাঠা জমির ওপর ৪ তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা; মহাখালী ও মিরপুর, ঢাকায় ৮.৫ শতাংশ জমি ক্রয় ২৩ লাখ টাকা; ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ১৪৫ শতাংশ কৃষি জমি ক্রয় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকা; পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট ক্রয় ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা; খালপাড়, শাইনপুকুর, দোহার, ঢাকায় ৪০০০ বর্গফুটের ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ ৮০ লাখ টাকা ও পাতালিয়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকায় ২৬ শতাংশ জমি ক্রয় ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
আসাদুজ্জামান খান মোট ১৭ কোটি ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সেগুলো হচ্ছে- ব্যবসার মূলধন ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৫ টাকা; শেয়ার (সাভার রিফেক্টরিজ লি.) ২৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা; গাড়ি নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৪৭০৭ কেনায় ৭৩ লাখ টাকা; গাড়ি নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-৮৪৫৬ কেনায় ৮৮ লাখ ২২ হাজার ৫২৮ টাকা; আসবাবপত্র ১ লাখ টাকা; ইলেক্ট্রনিক্সসামগ্রী ১ লাখ টাকা; ঋণ প্রদান (স্ত্রী ও মেয়েকে) ১ কোটি টাকা; ঋণ প্রদান (তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান) ১ কোটি টাকা; হাতে নগদ ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৬ টাকা; হিসাব নং ০১০০০০৫৯০৭০৬৮, জনতা ব্যাংক পিএলসি, ফার্মগেট কর্পোরেট শাখা, ঢাকায় জমার স্থিতি ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৫১২ টাকা; ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বিজয় সরণী শাখা, তেজগাঁও ঢাকায় হিসাব নং ১১০১১১০০০০০১৫ তে জমার স্থিতি ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯৪ টাকা; হিসাব নং ১১০২০৬০০০০০১১ তে জমার স্থিতি ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার টাকা; হিসাব নং ১১০২০৬০০০০০৪৪ তে জমার স্থিতি ১ কোটি টাকা; হিসাব নং ১০২৪১১১০০০০০১১৫, উত্তরা ব্যাংক পিএলসি, আওলাদ হোসেন মার্কেট শাখা, এয়ারপোর্ট রোড, তেজগাঁও, ঢাকায় জমার স্থিতি ৬৪ হাজার ৩১৫ টাকা; হিসাব নং ০১২৪১০০১২০১০৪, সোনালী ব্যাংক পিএলসি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা শাখা, ঢাকায় জমার স্থিতি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ টাকা; হিসাব নং ১০০১৩০২০০১৬৪০, সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি, কর্পোরেট হেড অফিস ব্রাঞ্চ, ধানমন্ডি, ঢাকায় জমার স্থিতি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৬ টাকা; হিসাব নং ২৮০১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএলসি, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকায় জমার স্থিতি ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৮৭ টাকা; হিসাব নং ৪৩৯১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখা, ঢাকায় জমার স্থিতি ১ কোটি টাকা ও হিসাব নং ৫২১১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএলসি, গুলশান এভিনিউ শাখা, ঢাকায় জমার স্থিতি ৫৪ লাখ ২৪ হাজার ১৩৯ টাকা।
উল্লিখিত তথ্যাদি অনুযায়ী আসাদুজ্জামান খান মোট ১৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৪ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি একজন আয়করদাতা। তার আয়কর নথি নং ইটিআইএন-৫১১১১১২৫৫০৫৬ (পুরাতন নম্বর: ০৩৭-১০০-০২৪৫), কর সার্কেল-২৩ (কোম্পানি), কর অঞ্চল-০২, ঢাকা। ১৯৯৫-৯৬ হতে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তার দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য মোট আয় পাওয়া যায় ৬ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৩১০ টাকা। একই সময়ে তার প্রদর্শিত পারিবারিক ব্যয় ২ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৯২০ টাকা। পারিবারিক ব্যয় বাদে তার সঞ্চয় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯০ টাকা। তার অর্জিত মোট সম্পদের মূল্য ১৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৪ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার সঞ্চয় বা গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯০ টাকা। তার অবশিষ্ট ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ টাকার সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস তিনি দাখিল করতে পারেননি, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
অন্যদিকে, আসাদুজ্জামান খান নিজ নামীয় ৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৬ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। হিসাবগুলো হচ্ছে- হিসাব নম্বর: ০১০০০০৫৯০৭০৬৮, জনতা ব্যাংক পিএলসি, ফার্মগেট শাখা, ঢাকায় ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৪৮ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ১৫১ টাকা; হিসাব নম্বর: ১১০১১১০০০০০১৫, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বিজয় সরণী শাখা, ঢাকায় ০৭/১২/২০২২, ২৫/৭/২০২৩, ১০/১২/২০২৩ ও ০৯/৪/২০২৪ তারিখে মোট ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা; হিসাব নম্বর: ১১০২০৬০০০০০১১, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বিজয় সরণী শাখা, ঢাকায় ১৫/১২/২০২২ তারিখে ১ কোটি টাকা; হিসাব নম্বর: ১১০২০৬০০০০০৪৪, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বিজয় সরণী শাখা, ঢাকায় ১১/০১/২০২৪ তারিখে ১ কোটি টাকা; হিসাব নম্বর: ১০০১৩০২০০১৬৪০, সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি, কর্পোরেট হেড অফিস, ঢাকায় ১২/৩/২০১৮ তারিখে ১,০০,০০,০০০/- টাকা; হিসাব নম্বর: ৪৩৯১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখা, ঢাকায় ১৮/৩/২০২৪ খ্রি. তারিখে ১ কোটি টাকা; হিসাব নম্বর: ২৮০১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএসসি, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকায় ১৮/৩/২০২৪ তারিখে ১ কোটি টাকা ও হিসাব নম্বর: ৫২১১৩২২৮০৩০০১, সিটি ব্যাংক পিএলসি, গুলশান এভিনিউ শাখা, ঢাকায় ০১/০১/২০০০ হতে ১৩/৮/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ৬০ লাখ ১১ হাজার ২৮৫ টাকা। এভাবে তিনি মানিলন্ডারিং’র সম্পৃক্ত অপরাধের মাধ্যমে অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করেছেন। তদন্তকালে আসামির অন্যান্য সম্পদ ও অপরাধের সাথে অন্যান্য ব্যক্তির সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হবে।
লুৎফুল তাহমিনা খানের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আসামি
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি লুৎফুল তাহমিনা খান ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসাদুজ্জামান খান ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১ নং আসামিকে বর্ণিত অপরাধে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া, লুৎফুল তাহমিনা খান ২ নং আসামির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিজ এবং তার আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামীয় ১০টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত মোট ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করত: উক্ত অর্থের স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম কর্তৃক রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মিসেস লুৎফুল তাহমিনা খানের ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর নথি অনুসারে তার নামীয় মোট স্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং অর্জিত অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১০ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার ৯০ টাকা। অর্থাৎ, তার নামীয় মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯০ টাকা। অভিযোগসংশ্লিষ্ট লুৎফুল তাহমিনা খানের নামে তার স্বামী আসাদুজ্জামান খান থেকে গৃহীত ঋণের বর্তমান স্থিতি পাওয়া যায় ৫০ লাখ টাকা। ফলে দায় বাদে তার নীট সম্পদ পাওয়া যায় ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯০ টাকা। অভিযোগসংশ্লিষ্ট লুৎফুল তাহমিনা খানের আয়কর নথি পর্যালোচনায় ২০১৪-১৫ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তার মোট পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ টাকা। ফলে পারিবারিক ব্যয়সহ তার নামে অর্জিত সম্পদের মোট মূল্য ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ৩১৩ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে বর্ণিত সময়ে তিনি আয় প্রদর্শন করেছেন মোট ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৩ টাকা। আয়কর নথিতে তার আয়ের যেসব উৎস উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই রেকর্ডপত্র দ্বারা প্রমাণিত না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য নয়। গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭২২ টাকা যা তার মালিকানাধীন সম্পদের চেয়ে অনেক কম। ফলে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট লুৎফুল তাহমিনা খানের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকা।
অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায় যে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট লুৎফুল তাহমিনা খানের নিজ ও তার আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামীয় মোট ১০টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত মোট ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করে অর্থের স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, লুৎফুল তাহমিনা খানের মালিকানাধীন বর্ণিত সম্পত্তি অর্জনের বৈধ আয় না থাকায় তা তার স্বামী আসাদুজ্জামান খান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে অর্জন করেছেন বলে দেখা যায়, যার জন্য তার আসাদুজ্জামান খান প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
শাফি মোদ্দাছির খান (জ্যোতি) নামের মামলায়ও আসাদুজ্জামান আসামি
মামলার এজাহারে বলা হয়, শাফি মোদ্দাছির খান (জ্যোতি) এবং তার পিতা আসাদুজ্জামান খান পরস্পর যোগসাজশে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজে ভোগদখলে রেখেছেন। এ ছাড়া, তার নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে নিজ এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসাবে মোট ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)ও ৪(৩) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, সাফি মোদাচ্ছের খানের নামে অর্জিত/প্রাপ্ত স্থাবর সম্পদের মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪৫ টাকাসহ মোট ১৭ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৭৪৫ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৩ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৬ টাকা। তার নামে কোনও দায়-দেনার তথ্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ (২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত) আয়কর নথিতে নীট সম্পদ প্রদর্শন করা হয়েছে ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ২২ টাকা। আসামি সাফি মোদাচ্ছের খানের নামে ব্যয়সহ তার নীট সম্পদ পাওয়া যায় ২০ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার ৮৩১ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৯২ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৯ টাকা। অর্থাৎ, সাফি মোদাচ্ছের খানের অর্জিত সম্পদ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০২ টাকা, যা তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ মর্মে প্রতীয়মান হয়। তার ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০২ টাকার সম্পদ অর্জনের সপক্ষে গ্রহণযোগ্য আয়ের কোনও উৎস অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায় যে, সাফি মোদাচ্ছের খানের নিজ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসাবে মোট ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকার লেনদেন হয়েছে। তার লেনদেন সন্দেহজনক এবং তার পিতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপালন কালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মর্মে প্রতিয়মান হয়। এ ছাড়া, টাকা বৈধকরণের জন্য তার নামে ব্যবসা দেখিয়েছেন। ব্যবসায়ে যে পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করেছেন, তার তুলনায় তার হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থান্তারের মাধ্যমে অসংখ্য সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
মেয়ের অবৈধ সম্পদের উৎসও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানের নামে মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামি করে এজাহারে বলা হয়, শাফিয়া তাসনিম খান ও আসাদুজ্জামান খান একে অপরকে সহযোগিতা করে পরস্পর যোগসাজশে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দখলে রেখে এবং নিজ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজ ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসেবে মোট ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকা সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেনের মাধ্যমে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ৪(৩) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অনুসন্ধানে শাফিয়া তাসনিম খানের সংগৃহীত তথ্য/রেকর্ডপত্র অনুযায়ী তার নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ কোটি ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ টাকাসহ মোট সম্পদের মূল্য ৮ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬১৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এই সময়ে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ৩ কোটি ১৬ লাখ ৪ হাজার ২৩ টাকা। তার নামে দায়-দেনার তথ্য পাওয়া যায় ৫০ লাখ টাকা। দায় বাদে তার নীট সম্পদ পাওয়া যায় ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬১৪ টাকা। ব্যয়সহ তার নীট সম্পদ পাওয়া যায় ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৭ টাকা। এ সম্পদ অর্জনে বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় ১ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ১৪৮ টাকা। অর্থাৎ, শাফিয়া তাসনিম খানের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৯ টাকা।
এ ছাড়া তার ৯টি ব্যাংক হিসেবে ঘুষ-দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং’র মাধ্যমে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাফিয়া তাসনিম খান নিজ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে মোট ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকা লেনদেন করেছেন।
এপিএস মনির হোসেনেরও অবৈধ সম্পদ
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনের নামে মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনপূর্বক নিজ ভোগ দখলে রেখেছেন। তার নিজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসাবে অপরাধলব্ধ মোট ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকা স্থানান্তর/হস্তান্তর/রূপান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ