সস্ত্রীক সুবিধ আলী ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সুবিদ আলী ভূইয়া ও মৃণাল কান্তি দাস (ডানে)
সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূইয়া এবং মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
সুবিদ আলীর স্ত্রী মাহমুদা আখতার এবং তাদের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার।আওয়ামী লীগ থেকে কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সুবিদ আলী।
একই দলের মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন মৃণাল কান্তি।তার সঙ্গে তার স্ত্রীরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন সার্বিক) আমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
দুদকের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম সংশ্লিষ্টদের বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদন দুই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগের পৃথক বর্ণনা রয়েছে।
সুবিদ আলীর বিরুদ্ধে আবেদন বলা হয়, সুবিদ আলী ভূইয়া ও তার ছেলে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
তারা নিজ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।
অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে অর্থপাচার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তুলে ধরে আবেদন বলা হয়, অনুসন্ধানের সময় গোপন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তাই তাদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।
মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে আবেদনে বলা হয়, মৃণাল কান্তি দাস ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
অবৈধ সম্পদের বর্ণনার বিষয়ে আবেদন বলা হয়, মৃণাল কান্তি অবৈধ আয়ে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ৭৮৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৭ কাঠা আয়তনের একটি প্লট রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
এতে বলা হয়, নিজ নামে ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯১ টাকা, ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩১ টাকার গাড়ি এবং তার স্ত্রী নিলীমা দাসের নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ১০৫ কাঠার প্লটের ওপর বহুতল ভবন ও ৯০ লাখ ২৪ হাজার ১৯১ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
মৃণাল কান্তি ও তার স্ত্রী নিলীমা অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে দাবি করে দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।তাই তাদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে আবেদন করা হলে আদালত তা আমলে নিয়ে আদেশ দিয়েছেন বলে দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন সার্বিক) আমিনুল ইসলাম তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ আমলে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগী অনেকের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার স্ত্রী মোছা. হোসনে আরা বেগম, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম ও তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানা মুক্তি, শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম।
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মন্নুজানের সঙ্গে তার ভাই-ভাতিজি, সাবেক সংসদ মো. সাদেক খান, তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান, স্ত্রী আফরোজ সুলতানার দেশত্যাগেও নিষেদাজ্ঞা আরোপ করেছেন আদালত।
সস্ত্রীক সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ও মো. আবদুল ওদুদ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
প্রিমিয়ার প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান মঈন ইকবাল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ আলী পড়েছেন নিষেধাজ্ঞার কবলে।
যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, তার স্ত্রী ফারহানা জাহান মালা, দুই মেয়ে সামিয়া জাহান অন্তরা, মাঈসা জাহান অহনা এবং ছেলে জাবীর চাকলাদার, বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান, তার স্ত্রী রওনক রহমান; গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী রুহুল আরা রহিম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
দেশত্যাগের বিষয়ে আরও অনেকের বিরুদ্ধে এসেছে নিষেধাজ্ঞা, অনেকে হয়েছেন গ্রেপ্তার।
/মামুন/সাইফ/