ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

আদালতে তোপের মুখে করজোড়ে ক্ষমা চাইলেন সেই হেলালুদ্দীন

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২০:৫৪, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
আদালতে তোপের মুখে করজোড়ে ক্ষমা চাইলেন সেই হেলালুদ্দীন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বিতর্কের অংশ হওয়া নির্বাচনের কমিশনের দাপুটে সেই সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদকে শুক্রবার আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদনের শুনানির সময় তার এক বক্তব্যের জেরে এজলাসে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাকে ধমক দেন ও কেউ কেউ মারধরের হুমকিও দেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে ইভিএম কারসাজির অভিযোগ আনলে এক পর্যায়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইভিএম তো আপনারই কিনেছেন।‘

আরো পড়ুন:

তখন শুরু হয় হৈ চৈ, হড্ডগোল। এজলাসে থাকা বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন, যার পরিণতি হয়ে আসে হেলালুদ্দীনের করজোড়ে ক্ষমা চাওয়া। শুনানি শেষ হয় তার চার দিনের রিমান্ড আদেশের মধ্য দিয়ে।

বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যার অভিযোগে পল্টন থানার এক মামলায় শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম নাজমিন আক্তারের আদালতে তোলা হয় তাকে, চাওয়া হয় ১০ দিনের রিমান্ড।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাচান রিমান্ড আবেদন করেন, রাষ্ট্রপক্ষে যার শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

তিনি বলেন, হেলালুদ্দীন নির্বাচনের সময় টিভিতে এমন বক্তব্য রাখতেন যে, কোটি কোটি মানুষ ভোট দিয়েছে। ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি-ই এর মাস্টার মাইন্ড।

‘হাসিনা সরকারের কাছ থেকে ইভিএম কেনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়। বক্তব্য দেওয়ার সময় টিভির সামনে এমনভাবে বসতেন যে তিনি রাজা, বাকিরা প্রজা।‘

হেলালুদ্দীনকে হেফাজতে রেখে ১০ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার যে আবেদন পুলিশ করেছে, সেটি মঞ্জুর করতে আদালতের কাছে আর্জি জানান ওমর ফারুক।

আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।

আইনজীবীদের শুনানির মধ্যেই আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন হেলালুদ্দীন আহমেদ, যা নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল।

হেলালুদ্দীন বলেন, ‘যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে, ওই এলাকায় আমি কখনই যাইনি৷ আড়াই বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাই। ‘

পরে আবার বলেন, ‘২০১৬ সালের পর ওই এলাকায় যাইনি।‘

এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে ইভিএম কারসাজির অভিযোগ আনেন।

তবে হেলালুদ্দীন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘ইভিএম নির্বাচন কমিশন ক্রয় করেনি। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এটা কেনা হয়। আমি কোনোভাবে ইভিএম ক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত না।‘

এরপর তিনি চাকরিজীবনের বৃত্তান্ত তুলে ধরে বলেন, ‘৩৫ বছর চাকরি করেছি। বিএনপি, এরশাদ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি করেছি। ১০ বছর ম্যাজিস্ট্রেসি করেছি।

আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার কাছে ন্যায় বিচার আশা করি।‘

ইসির এই সাবেক সচিব যখন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ওমর ফারুক দাঁড়িয়ে তার ১০ দিনেরই রিমান্ড চান।

তখন হেলালুদ্দীন স্মিত হেসে বলেন, ‘ইভিএম তো আপনারাই কিনেছেন।‘

এতে ক্ষিপ্ত হন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাকে ধমক ও কটূক্তি করতে থাকেন তারা। তখন হেলালুদ্দীন হাত জোড় করে তাদের কাছে ক্ষমা চান।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী এ মোহাম্মদ হানিফ মিয়া তার বিএনপিপন্থি সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটা আদালত। এভাবে কথা বলা ঠিক নয়।‘

এক আইনজীবী হেলালুদ্দীনকে মারার হুমকি দেন। হানিফ মিয়া এর প্রতিবাদ করেন। তখন ওমর ফারুক হানিফ মিয়াকে বের হয়ে যেতে বলেন।

আদালতের উদ্দেশে ওমর ফারুক বলেন, ‘উনি (হানিফ মিয়া) ডিস্টার্ব করছেন।‘

তোপের মুখে বের হয়ে যান আইনজীবী হানিফ মিয়া। চুন হয়ে যান হেলালুদ্দীনও।

এরপর আদালতের আদেশ আসে হেলালুদ্দীনকে চার দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের।

এর আগে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার তুলাতলী এলাকা থেকে হেলালুদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বিপুল টাকা ব্যয়ে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণা‘র করার অভিযোগের মামলায়। ওই মামলায় এসব নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদেরও আসামি করা হয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে একরামুল করিম নামের এক মুক্তিযোদ্ধার করা মামলায় সাবেক ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের আসামি করে চট্টগ্রামে প্রতারণা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। যারা কমিশনে ছিলেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নির্বাচনী মাঠে একপেশে আচরণ করেছে।

বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণার মামলা করা হয়েছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় এ কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন হেলালুদ্দীন। তখন তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ এনেছিল বিএনপি। গণমাধ্যমে নিয়মিত মুখ ছিলেন হেলালউদ্দীন, যার বিরুদ্ধে রাতের ভোট আয়োজনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ রয়েছে।

ওই বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পেছনের কনফারেন্স রুমে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে হেলালুদ্দীনের গোপন বৈঠক করার অভিযোগ করেছিল বিএনপি। অবশ্য তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

ঢাকা/মামুন/রাসেল পারভেজ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়