‘পুলিশ হেফাজতে’ বডি বিল্ডারের মৃত্যু: তদন্তে সিআইডি
‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে’ বডি বিল্ডার মিস্টার বাংলাদেশ ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাঈনুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে করা মামলা এবার সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন বাদীর নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিচে নন এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।’’
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে তাদের অব্যাহতির আবেদন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।দ এর বিরুদ্ধে বাদী নারাজি দাখিল করেন।
গত ৩১ জানুয়ারি একই আদালতে নিহত মো. ফারুকের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- বংশাল থানার কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. ইমদাদুল হক, বংশাল থানার এসআই আবু সালেহ, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদ ও জেল সুপার কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকা।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ফারুক হোসেন খাজা দেওয়ান সিং লেন লালবাগের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর ফারুক হোসেন স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে তিনি সেখানে ছুটে যান। দেখেন, ফারুককে পুলিশ সদস্যরা মারধর করে আটকে রেখেছে। হ্যাপী সেখানে উপস্থিত এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল, তাদের গালিগালাজ করেছে। এমনিতে ছাড়া যাবে না। ওকে ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে। তখন হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডি বিল্ডার ছিলেন মিস্টার বাংলাদেশ হিসেবে। তিনটি ছোট ছোট সন্তান, তার ইনকামেই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে এক লাখ থেকে কমিয়ে তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে ব্যাপক মারধর করে। আসামিরা জানায়, সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের বড় স্যার জানে কী করবে। এর কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।
হ্যাপী তখন মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে আকুতি মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। তারা তাকে পরদিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলে। পরদিন হ্যাপী কোর্টে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে অনেক কষ্টে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। স্ত্রীকে মারধরের কথা জানান ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলে। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। ৫-৬টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান। ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে জানান, ফারুক মারা গেছেন। হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর লাশ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ