আসামিপক্ষে শুনানি করতে এসে সুখবর পেলেন সমাজী, করলেন না শুনানি
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করতে এসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার সুসংবাদ পান সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় একাধিক প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরবর্তীতে ১০টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে স্থাপিত হাজতখানা থেকে তাদের এজলাসে তোলা হয় তাদের। বেলা ১১ টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানি শুরু হলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে মেনশন করে বলেন, ‘আজকে আসামি পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী শুনানি করতে এসেছেন। তবে তিনি রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে যাচ্ছেন বলে জেনেছি। ২/১ দিনের মধ্যেই হয়তো সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। তাই তিনি আসামি পক্ষে শুনানি করলে এটা হবে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট।’
এসময় তাজুল ইসলাম তাকে আসামি পক্ষে শুনানি না করতে অনুরোধ জানান।
এরপর এহসানুল হক সমাজী আদালতকে বলেন, ‘আমি এখনো ফরমাল কোনো লেটার পাইনি। ফরমাল লেটার না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছিনা। এছাড়াও যে পদে আমাকে নির্বাচিত করা হবে সেটা আমি গ্রহণ করি কিনা তাও ভাববার বিষয়।’
এসময় বিচারক জানতে চান কোন আসামির পক্ষে তিনি এসেছেন। উত্তরে সমাজী পাঁচজন আসামির নাম বলেন। এরা হলেন-সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, তৌফিক-ই-এলাহী, ফারুক খান ও জুনায়েদ আহমেদ পলক।
এসময় তিনি শুনানি না করে আরেক আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলুকে দ্বায়িত্ব দেন।
এদিন সকাল ১১ টায় শুনানি শুরু হয়। ১২ টা ৮ মিনিটের দিকে শুনানি শেষ হয়। জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিন তদন্ত সংস্থা দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। আদালত তদন্ত শেষ করতে এক মাস সময় বেঁধে দেন। এসময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে এদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ফারুক খান, শাহজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, দীপু মনি, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাককেও হাজির করার নির্দেশ ছিলো। তবে মির্জাপুর থানার এক মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি। তাজুল ইসলাম ধার্য তারিখে তাকে হাজির করার নির্দেশনা চান।
গত ২৭ অক্টোবর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ থাকে, এরআগে এহেসানুল হক সমাজীকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাকে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে অভিহিত করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। পরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি আর যোগদান করেননি।
ঢাকা/মামুন/টিপু