ন্যায়বিচার চাইলেন ফিরোজ, ক্যান্সারের কথা জানালেন কামরুল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন। লালবাগ থানার হত্যা মামলার শুনানিতে কামরুল ইসলাম আদালতকে জানান অসুস্থতার কথা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে তারা কথা বলেন।
এদিন সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিসহ ১৮ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে জান্নাতুল ফেরদৌস হত্যা মামলায় আনিসুল হক, লালবাগের আজিমপুর এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় কামরুল ইসলাম ও সোলায়মান সেলিমেরর, চকবাজারের চানখারপুল এলাকায় রাকিব হাওলাদারকে গুলি করে হত্যা মামলায়ও সোলায়মান সেলিমের এবং যাত্রাবাড়ীতে সাইদুর রহমান ইমরান হত্যা মামলায় ফিরোজের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টার একটু আগে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আসামিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলেন, কোর্ট উঠছে। কিন্তু আসামিরা সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে কথা বলতে থাকে। তখন ওমর ফারুক আদালতকে বলেন, তাদের কোনো চিন্তায় নাই যে কোর্ট উঠছে।
এরপর শুনানি শুরু হয়। প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এরপর কামরুল ইসলাম ও সোলায়মান সেলিমের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এসময় আমির হোসেন আমু আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, আমু সাহেবের বয়স ৯০ বছর। তিনি অসুস্থ, দাঁড়াতে পারছেন। তার বসার ব্যবস্থা করার অনুমতি চাচ্ছি। এ সময় আমুও বিচারককে মুখ নেড়ে বোঝান তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। পরে আদালত তার বসার ব্যবস্থা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
কামরুল ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, তিনি ঢাকা বার ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য। এজাহারনামীয় ১ থেকে ৩০ নং আসামির নির্দেশে ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তো ৩৫ নং আসামি। তার বয়স ৭৬ বছর। এ বয়সে লাঠিসোটা নিয়ে কাউকে আঘাত করবেন। তিনি ডায়াবেটিস, হার্টের রোগী, ক্যান্সারে আক্রান্ত। আগে এক মামলায় ৮ দিন রিমান্ডে ছিলেন। আবার রিমান্ডে নিলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ সময় কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি একটু বলব।’’
তখন তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমি এক মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড থেকে আসছি। আমি স্টোমাক ক্যান্সারের রোগী। ডায়াবেটিস আছে। এ ছাড়া নানা রোগে আক্রান্ত। আর যেখানে ঘটনা ঘটেছে, ওটা আমার নির্বাচনি এলাকাও না। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। রিমান্ডে নিলে কষ্ট হবে।’’
তখন আইনজীবী বলেন, ‘‘তিনি স্ট্রোমাক ক্যান্সারের রোগী। অপারেশন না করে সতর্কভাবে চলতে হয়, খেতে হয়। সার্বিক বিবেচনা তাকে রিমান্ডে নেওয়ার মত যৌক্তিকতা নেই।’’
সোলায়মান সেলিমের পক্ষে শ্রী প্রাণনাথ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে তার বিরুদ্ধে একটা জিডি বা মামলা নেই। এমপি হওয়ার গন্ধের কারণে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। কোথাও উল্লেখ নাই আমি কী করছি। জড়িত থাকলে ১০ দিনেরই রিমান্ড দেন।’’
কামরুল ইসলামের বক্তব্যের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘কামরুল ইসলাম বললেন ঘটনাস্থল তার এলাকা না। তার এলাকা না হলে সোলায়মান সেলিমের এলাকা। তাহলে সোলায়মান সেলিম জড়িত। আর কোর্টে আসলে তারা বলে, কিডনি নষ্ট, হার্ট নাই, মগজ নাই। কিন্তু আন্দোলনের সময় সব ঠিক ছিল।’’
পরে আদালত কামরুল ইসলামকে তিন দিন ও সোলায়মান সেলিমের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরপর চকবাজারের চানখারপুল এলাকায় রাকিব হাওলাদারকে গুলি করে হত্যা মামলায় সোলায়মান সেলিমের ১০ দিনের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করে। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরপর আমির হোসেন হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়। আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জান্নাতুল ফেরদৌস হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
পরে যাত্রাবাড়ীতে সাইদুর রহমান ইমরান হত্যা মামলায় সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজের সাত দিনের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে ওমর ফারুক বলেন, ১৫ বছর তার দল ক্ষমতায় ছিল। মানুষ হত্যা, গুম, খুন, আয়নাঘর সৃষ্টি করে। তিনি এসব অপকর্মের সহযোগী। সংসদে হাসিনার পেছনে বসতেন। দেখাতেন হাসিনার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
ফিরোজের পক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করন। তিনি বলেন, তিনি সংসদের সর্বকনিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হন। ৮ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জিয়াউর রহমানের সময়ও নির্বাচিত হন। আর যখন ঘটনা ঘটেছে তখন তিনি এলাকায় ছিলেন। আর তাকে আসামি করে ভুল করেছে, বাদী এটা বুঝতে পেরেছে। তিনি আদালতে এসে বলেছেন আ স ম ফিরোজের নাম আসামির তালিকায় ছিল তিনি জানতেন না। তিনি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না। বাদী এসে বলেছেন তার বিরুদ্ধে আপত্তি নাই।
এ দিন আদালতে ন্যায় বিচার চেয়ে তখন আ স ম ফিরোজ আদালতকে বলেন, ‘‘যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য বলে মিথ্যা বলিব না। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ও আমি এমপি নির্বাচিত হই। এরশাদের আমলেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। ৫ তারিখে আমার নির্বাচনি এলাকায় ছিলাম। ঢাকায় ছিলাম না। সেখানকার ডিসি, এসপিদের সঙ্গে ফুটবল টুর্নামেন্টে ছিলাম। আল্লাহর পর ন্যায়বিচারক হলেন আপনি হাকিম। আপনি ন্যায়বিচার করবেন। এ মামলার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক কারণে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। বাদী আদালতে এসে আমার পক্ষে বলে গেছেন। এ মামলায় আমার নাম থাকার ব্যাপারে বাদী কিছু জানেন না। আমাকে মামলা থেকে পরিত্রাণ দেবেন।’’
পরে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ