ফাঁসির আসামির সঙ্গে আমাকে রাখা হয়েছে: পলক
আদালতে পুলিশি প্রহরায় জুনাইদ আহমেদ পলক।
রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকায় রিয়াজুল তালুকদার হত্যা মামলায় সাবেক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের গ্রেপ্তারের শুনানি ছিল ২ ডিসেম্বর। এদিন আদালতে বিচারককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘কাশিমপুর কারাগারে পাঁচ হাত লম্বা চার হাত চওড়া সেলে আমাকে রাখা হয়েছে। এ কারাগারে বেশিরভাগ দুর্ধর্ষ খুনি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।’’
সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় রিয়াজুল নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর একরামুল হক পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানিতে সাবেক এই মন্ত্রীকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি ‘কিছু কথা বলতে’ আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেন।
আদালত অনুমতি দিলে পলক জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে তিনি ডিভিশন পাচ্ছেন না। পাঁচ হাত লম্বা, চার হাত চওড়া সেলে তাকে রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ-সহ ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারাগারে বেশিরভাগ দুর্ধর্ষ খুনি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদের মধ্যে তাকে রাখা হয়েছে।
এ সময় আদালত পলককে লিখিত আবেদন দাখিল করতে বলেন। পরে আদালত পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শুনানি শেষে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইসলাম রাখি বলেন, ‘‘জুনায়েদ আহমেদ পলক আজ আদালতে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাকে ডিভিশনে না রেখে নরমাল কয়েদিদের সঙ্গে সেলে রাখা হয়েছে। যে সেলে সব ফাঁসির আসামি রয়েছে। সেখানে দুই হাজারের মধ্যে ১৫০০ আসামি রয়েছে, যারা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। এমন ধরনের একটা জায়গায় তাকে রাখা হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘গত ২৭ অক্টোবর জুনায়েদ আহমেদ পলক ডিভিশন প্রাপ্ত হন। ডিসির কাছ থেকে অনুমোদন পান। তিনি ডিভিশনেও ছিলেন। পরে কাশিমপুর নিয়ে যাওয়ার পর হাইসিকিউরিটির ৪ নং সেলে তাকে রাখা হয়েছে। যেখানে কোনো ধরনের ডিভিশন নেই। শারীরিকভাবে তিনি অনেক অসুস্থ। ডিভিশনাল সেলে সুযোগ-সুবিধা না থাকার ফলে তিনি শারীরিক-মানসিকভাবে অনিরাপত্তার মাঝে জীবনযাপন করছেন। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেছেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।’’
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জঙ্গিও রয়েছে জানিয়ে ফারজানা ইসলাম রাখি বলেন, ‘‘ওখানে সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি যেহেতু রয়েছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড আসলে অনেক ভয়ংকর থাকে। অনেকে আছে এর মধ্যে জঙ্গি। এ ধরনের জঙ্গিদের সঙ্গে তাকে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। তিনি অনিরাপত্তায় ভুগছেন। আরেকটি বিষয়, সপ্তাহে প্রত্যেক আসামির পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে। এখানে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাকে তার পরিবারের কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ফোনের যোগাযোগের ব্যবস্থা কাট করে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে আদালতকে জানিয়েছি। যদি রেজাল্ট না আসে, অবশ্যই লিখিত জানাব।’’
গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জুনায়েদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট শাহবাগ থানার তোপখানা রোডে ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে রিয়াজুল তালুকদার গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন রিয়াজুলের সহকর্মী বিল্লাল হোসেন।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ