তাপসের বিরুদ্ধে মামলাকে ‘বানোয়াট’ দাবি করে যেসব যুক্তি তুলে ধরলেন তার বাবা
সোমবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কৌশিক হোসেন তাপসের বাবা
অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে সংগীতভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘গান বাংলার' মালিকানা দখলের অভিযোগে দায়ের করা মামলা ‘বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসের বাবা দেলোয়ার হোসেন রাজা।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত কৌশিক হোসেন তাপসকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিন তাপসের বাবা আদালতে হাজির হন।
পরে দেলোয়ার হোসেন রাজা সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথমত, উনারা যে সময়ের কথা বলেছেন মামলায়—২০১১ সাল। মালিকানার কাগজপত্র দেখবেন, সেখানে আমাদের সাথে যাদের চুক্তি হয়েছে—আমান উল্লাহ খান চঞ্চল, রবিশঙ্কর মৈত্রী এবং বখতিয়ার শিকদার। তাদের সাথে আমরা যৌথভাবে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আসি। আমাদের নামে মামলাটা দায়ের করা হয়েছে যে, আমরা তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে সিগনেচার নিয়েছি। এটা একশতে একশ ভাগ মিথ্যা। দ্বিতীয়ত, ফারজানা মুন্নির সাথে তখনো তাপসের বিয়ে হয়নি। তাহলে তারা দুজন এক হলো কীভাবে? সেটাও আরেকটা ব্যাপার। তিন নাম্বার বিষয় হলো—আমাদের কাছে যে ডকুমেন্টসগুলো ওই সময়ের মালিকপক্ষ দিয়েছিল, যেটা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা পেয়েছিলাম; সেই মালিকানার ভেতরে আমরা দেখেছি, উনারা ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে রেজিস্ট্রারের সামনে সিগনেচার করেন। সেখানে লেখা আছে, তারা তাদের টেন্ডার শেয়ার হস্তান্তর করে নিঃশর্তবান হইলেন। এটা হলো ২০১১ থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তাহলে আমরা কীভাবে জোর করে তুলে নিয়ে গেলাম?”
তিনি বলেন, “আরও একটা মজার বিষয় আছে, তারা এই মামলার ভিতর একটা কাগজ দিয়েছেন। বুঝে দিয়েছেন বা না বুঝে দিয়েছেন, জানি না। অনেক মিথ্যা বলতে গেলে মাঝে-মধ্যে কিছু সত্য চলে আসে। উনারা ২০১১ সালে যে জিডি করছেন, সেই জিডিতে যেসব ব্যক্তিদের নাম আছে, সেখানে তাপস, মুন্নি, নাবিল আশরাফের নাম নেই। নাবিল আশরাফ আমাদের একজন কর্মকর্তা— জিএম। উনার নাম দিয়েছেন। উনি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে আমাদের এখানে জয়েন করছেন। তার আগে ওই লোকগুলোকে তুলে নিয়ে আসা, উনার কি ঠেকা পড়ছে? ফেব্রিকেটেড মামলা।”
দেলোয়ার হোসেন রাজা বলেন, “এর আগে তার (কৌশিক হোসেন তাপস) বিরুদ্ধে একটা ভুয়া মামলা দিয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে থাকার পরও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে টাকা-পয়সা দিয়ে আন্দোলন দমানোর। এটাও ছিল ভুয়া। আরও একটা মামলা দিয়ে বিব্রত করছে। তাপস এটিএন ইভেন্টসের এমডি ছিল। ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক আমরা ছিলাম। এটিএন মিউজিকে সে ডিরেক্টর ছিল। অতএব, হঠাৎ করে সে রাস্তা থেকে মাটিতে পড়ছে, এমন কোনো ঘটনা না। ৮ বছর বয়স থেকে তার গানের ক্যাসেট বাজারে।”
তিনি বলেন, “চুক্তি থেকে শুরু করে লাইসেন্স কেবল তাপসের নামে ইস্যু হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালের আগে গান বাংলা নামে কোনো লাইসেন্স ছিল না। গান বাংলার ৯৪ শতাংশ শেয়ার আমাদের, বাকি ৬ শতাংশ বাইরে আছে।”
কৌশিক হোসেন তাপস অন্যায় করে থাকলে সাংবাদিকদের তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তার বাবা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই সুযোগে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে, আর কিছু না। আমাদের কাছ থেকে হয়ত বড় ধরনের কোনো অর্থ আশা করে অথবা কোনো একটি রাজনৈতিক পক্ষ আছে, যারা মনে করছে, এখন তো কিছু একটা দখল করে নিয়ে বসে গেলে ২/৪/৬ বছরের মধ্যে কেউ ঢুকতে পারবে না।”
গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে কৌশিক হোসেন তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন।
গত ২৫ নভেম্বর সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ কৌশিক হোসেন তাপসসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—তাপসের স্ত্রী ও গান বাংলার চেয়ারম্যান ফারজানা মুন্নী, রবিশঙ্কর মৈত্রী, এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), সৈয়দ নাবিল আশরাফ। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক হারুনুর রশীদ তাপসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছেন। আদালত তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ৯ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
সোমবার কৌশিক হোসেন তাপসকে আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি করেন। আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক