২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (ফাইল ফটো)
২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং-সম্পৃক্ত অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কমিশনের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “আসামি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (৭৪) অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৫,৩৪,৬৬,২৩৮/- (পঁচিশ কোটি চৌত্রিশ লক্ষ ছেষট্টি হাজার দুইশত আটত্রিশ) টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জনপূর্বক নিজ ভোগদখলে রেখে অপরাধমূলক অসদাচরণ এবং ৬৫টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৪৩,০৪,৪৭,৩৭৫ টাকা লেনদেন করে মানিলন্ডারিং-সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে রূপান্তর বা স্থানান্তর বা হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীত প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।”
দুদক জানায়, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যাদির আলোকে দেখা যায়, আসামি সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি) ছিলেন (সংসদীয় আসন-৪৬, নওগাঁ-১)। এর মধ্যে তিনি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অনুসন্ধানকালে সাধন চন্দ্র মজুমদারের স্থাবর সম্পদ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তিনি ধানমন্ডিতে কনকর্ড তরুলতায় ৪৪৭৫ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার উত্তরায় ৫ কাঠা জমিসহ সর্বমোট ৮,৯৭,৮৯,৯৩২ (আট কোটি সাতানব্বই লক্ষ উননব্বই হাজার নয়শত বত্রিশ) টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া, অনুসন্ধানকালে তার নামে ব্যবসার মূলধন; জিপ গাড়ি; এফডিআর; স্বর্ণালংকার; আসবাবপত্র; ব্যাংক ও নগদ মূলধনসহ সর্বমোট ৯,১৫,৫০,৩৬৩ (নয় কোটি পনের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার তিনশত তেষট্টি) টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার তথ্যাদি পাওয়া যায়। তাছাড়া ব্যাংকে তার ঋণ স্থিতি (দায়) রয়েছে সর্বমোট ১৫,৮৩,৯৫৪ টাকা, যা তার পরিশোধযোগ্য দায়।
অনুসন্ধানকালে আসামি সাধন চন্দ্র মজুমদারের টিআইএন নম্বর-৩২৬০৪৯৭৩৩৮০৯, সার্কেল-০৪, কর অঞ্চল রাজশাহীতে দাখিলকৃত ২০১১-২০১২ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনা করা হয়েছে।
উল্লিখিত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সাধন চন্দ্র মজুমদারের নামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ (৮,৯৭,৮৯,৯৩২ + ৯,১৫,৫০,৩৬৩) ১৮,১৩,৪০,২৯৫ টাকা। পরিশোধযোগ্য দায় ১৫,৮৩,৯৫৪ টাকার ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত ঋণ বাদে তার নিট সম্পদ/সঞ্চয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় (১৮,১৩,৪০,২৯৫ ১৫,৮৩,৯৫৪) = ১৭,৯৭,৫৬,৩৪১ টাকা। তিনি পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ১৩,৬৫,৪৩,৪২০ টাকা ব্যয় করেছেন। ব্যয়িত অর্থ সম্পদের পরিমাণ (১৭,৯৭,৫৬,৩৪১ + ১৩,৬৫,৪৩,৪২০) = ৩১,৬২,৯৯,৭৬১ টাকা। উক্ত অর্জিত সম্পদের বিপরীতে আয়কর নথি ও প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় তার ৬,২৮,৩৩,৫২৩ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি ২৫,৩৪,৬৬,২৩৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে, সাধন চন্দ্র মজুমদারের নিজ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত ৬৫টি হিসাবে মোট ৪৩,০৪,৪৭,৩৭৫ টাকা লেনদেন করে ২৩,৪৬,৯৫,২৫৭ টাকা জমা ও ১৯,৫৭,৫২,১১৮ টাকা উত্তোলন করেছেন। বর্তমানে এসব অ্যাকাউন্টে ৩,৯৬,২৯,৯৭০ টাকা স্থিতি আছে। তার উক্ত বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন সন্দেহজনক, যা খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা মর্মে প্রতীয়মান হয়। এসব টাকা বৈধ করার জন্য বা উৎস আড়াল করার জন্য তিনি তার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে ব্যাপক লেনদেন করেছেন। উক্ত ব্যবসায় যে পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ দেখিয়েছেন, সে তুলনায় তার ব্যাপক সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন এবং অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থান্তরের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক