ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

২০২৪: শেষ হয়েছে যেসব আলোচিত মামলার বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
২০২৪: শেষ হয়েছে যেসব আলোচিত মামলার বিচার

২০২৪ সালে রাজনৈতিক মামলায় সরগরম ছিলো পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা। এর পাশাপাশি শেষ হয়েছে বেশ কিছু আলোচিত মামলার বিচারও।

সগিরা মোর্শেদ হত্যা
৩৪ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪) নিহত হন। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচার শেষ হয়েছে এ বছর। গত ১৩ মার্চ রায়ে আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজাকে যাবজ্জীবন কারাদ-দেন দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক। রায়ে ডা. হাসান আলী চৌধুরী, সায়েদাতুল মাহমুদ ওরফে শাহীন এবং মন্টু মণ্ডল খালাস পান।

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা
শেষ হয়েছে নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার। ২৬ বছর আগে খুনের মামলায় ৯ মে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রায় ঘোষণা করেন।  রায়ে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডিত এই তিন আসামি পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন। অন্য ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন। তারা হলেন-সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন,  আদনান সিদ্দিকী, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী।

আরো পড়ুন:

রেনু হত্যা মামলা
পাঁচ বছর আগে ২১ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। ৯ অক্টোবর এ মামলার রায়ে সবজি বিক্রেতা ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড, ময়না বেগম, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন ও আসাদুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্তি মহানগর দায়রা জজ। তবে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান।

হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলা
হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দুর্নীতির ১১ মামলার মধ্যে এক মামলার রায় হয়েছে। রায়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেমের আদালত এ রায় দেন। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক শীর্ষ সাত কর্মকর্তাকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কাদের খানের দণ্ড
জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক সংসদ সদস্য ডা. কর্নেল (অব.) আব্দুল কাদের খানকে গত ৪ এপ্রিল চার বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ৬১ লাখ ৯২ হাজার ৭৯১ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

স্ত্রীসহ আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের সাজা
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাবিয়া চৌধুরীকে চেক ডিজঅনারের এক মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ। দণ্ডের পাশাপাশি তাদের চেকের সমপরিমাণ তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

জবি শিক্ষার্থীর সাজা
হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ১৩ মে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী হত্যা
তিন বছর আগে মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী নূরুল আমিন তপুকে অপহরণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক ১৯ নভম্বের মো. আরিফুল ইসলাম, মো. ইমরান হোসেন ও মো. ইয়ামিন মোল্যাকে এ রায় দেন।

এনজিও কর্মী খুন
সাত বছর আগে ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় আশা এনজিও'র কিস্তির টাকা আদায় করতে গিয়ে সিনিয়র লোন অফিসার মোছা. সাবিনা ইয়াসমিনকে খুনের মামলায় ২৫ নভেম্বর রায় দেন আদালত। ঢাকার প্রথম অতরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ মোসা. রাজিয়া খাতুন ও মো. আশরাফুল ইসলাম মানিককে মৃত্যুদণ্ড দেন।

ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড
দুই বছর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার আমবাগিচা এলাকায় নিজ মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবা নুরে আলম ফকিরকে ২৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

পরকিয়া প্রেমিকসহ মায়ের যাবজ্জীবন
১২ বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আড়াই বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান রিয়াকে খুনের দায়ে মা রোজিনা আক্তার ও তার পরকিয়া প্রেমিক সুলতান মাহমুদকে ২১ মাচ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪।

অন্যান্য মামলা
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী জামিল হোসেনকে (৩২) গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যার দায়ে ১৭ অক্টোবর স্ত্রী মৌসুমি, ভায়রা জুয়েল রানা ওরফে তানভীর ও ভাড়াটিয়া খুনি শফিকুল আলম ওরফে কসাই শফিককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ।

টাঙ্গাইলে হেবিটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘টিআইএসটি' এর ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর মাহতাব ইশরাককে খুনের মামলায় চার জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২৯ জুলাই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক রায়ে আবু ফয়সাল, অমিত হাসান, আরিফুল ইসলাম অনিক ও খন্দকার মেহেদী হাসান নভেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

১৮ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন এলাকায় শিল্পী বেগম নামে ১১ বছরের এক গৃহকর্মীকে খুনের দায়ে নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ১৪ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক এ রায় দেন।

২১ বছর আগের রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় হাবিলদার সুরুজ আলীকে হত্যার দায়ে ১৬ মে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। দণ্ডিতরা হলেন-আনোয়ার হোসেন, মো. বোরহান উদ্দিন ওরফে জিন্নাতুল আলম এবং আব্দুল হক ওরফে আব্দুল্লাহ।

১৫ বছর আগে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় স্ত্রী ও সাত মাসের শিশু কন্যাকে হত্যার দায়ে ১১ জুন কাওসার ওরফে ফারুককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।

১৬ বছর আগে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় রাজীবুল আলম নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুই চোখ উপড়ে ফেলার মামলায় পাঁচ জনকে ১ ডিসেম্বর  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-বিজয় ওরফে শামীম আহম্মেদ, দ্বীন ইসলাম, মো. ইকবাল, নাছু ওরফে নাসির উদ্দিন ও রাজিব ওরফে মোটা রাজিব। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার জন খালাস পান। এরা হলেন-রিপন, রাশেদ, তপন ও রাসেল।

তিন বছর আগে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জের পশ্চিম রোহিতপুর এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আলীকে হত্যার দায়ে ২৪ এপ্রিল ভাতিজা ঠান্ডুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।

৬ বছর আগে রাজধানীর বনানী এলাকায় ১০ বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে জুয়েল নামে এক ভাড়াটিয়াকে ৫ মে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়