এক পতনেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট
বিদায়ী বছরের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দেওয়া হয়। রায়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন শ্রম আদালত। ওই সময় হয়তো কেউ ধারণাও করতে পারেননি কয়েকমাস পরেই দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন তিনি। ৮ মাসেই মাথায় এসে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে এলেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের দৃশ্যপট পাল্টাতে হয়তো কয়েকমাস সময় লেগেছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে তা লেগেছে হয়তো কয়েকদিন। জুন থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কারের আন্দোলন জোরদার হয় জুলাইয়ের মাঝ থেকে। সেই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় ৫ আগস্ট। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। মুহুর্তেই পাল্টে যায় দেশের দৃশ্যপট। যার প্রভাব দেখা গেছে আদালতপাড়াতেও। যারা এক সময় আদালতপাড়ায় রাজত্ব করতেন তাদের উপস্থিতিই নেই। শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের গ্রেপ্তার, কারো ওপর ডিম, জুতা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনা-অঘটনার মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল। বিদায়ী বছরের আদালতপাড়ায় ঘটে উল্লেখযোগ্য ঘটনার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
বছরের শুরুতে আদালতপাড়া ছিলো অনেকটাই শান্ত। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার মামলায় চলতি বছর জামিন পান গ্রেপ্তারকৃতরা। এরই মাঝে ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়। এটা নিয়ে ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ। গড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে সংগঠন। রাস্তায় নামে তারা। জুলাই মাসে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। মাসের মাঝে এসে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন, বনানী সেতু ভবনে আগুন, বিটিভি ভবনে আগুন, পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটে। আন্দোলন দমাতে আইন-শৃঙ্খলা, দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে শেখ হাসিনা সরকার। ঘটে গুলিতে নিহতের ঘটনাও।
আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে জারি করা হয় কারফিউ। এতেও দমে যায়নি ছাত্র সমাজ। ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল, জনসাধারণও রাস্তায় নামে। শুরু হয় বিরোধীদের ধরপাকড়। বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব, সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখা হয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে ২ আগস্ট ৪২ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিনের ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। ৪ আগস্ট জামিন দেওয়া হয় আরিফ সোহেলকেও।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। পাল্টে যাই দৃশ্যপট। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।
এরপর শুরু হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গুম, খুন, হত্যাচেষ্টাসহ নানান অভিযোগে মামলা। ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয় মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানী আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে। আসামি করা হয় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ সাত জনকে। এরপর থেকে একের পর এক মামলা হয় হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এরই মাঝে শুরু হয় গ্রেপ্তার। প্রথমেই গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় তাদের ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের ১০ দিনেরই রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতে তাদের ওপর ডিম, জুতা নিক্ষেপ করে আইনজীবীরা।
এর দুই দিন পর ১৫ আগস্ট রাজধানীর পল্টনে কামাল মিয়া নামে এক রিকশাচালককে হত্যা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতেরও ১০ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৬ আগস্ট টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানেরও হত্যা মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। এরপর রাজধানীর উত্তরা থেকে কোটি টাকাসহ গ্রেপ্তার হন সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক মন্ত্রী দীপুমনি, প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগটনিক সম্পাদক আহমদ হোসাইন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাল হোসাইন, সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, সাবেক এমপি আ স ম ফিরোজ, সাদেক খান, আবদুস সোবহান গোলাপ, সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি, হাজী সেলিম, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, আব্দুল্লাহ হিল ক্বাফি, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ কুমার আগরওয়াল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, ধানমন্ডি জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ হিল কাফী, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়াল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, ডিএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা জেলার উত্তর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহে আলম তালুকদার, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ও অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর শাহাদাৎ আলী, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক , রংধনু গ্রুপের পরিচালক ও রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান, যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানো, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, তরুন নাট্যনির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু, বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুণ, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ডিবি পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখার মাহমুদ, ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার দেখানো, গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, লাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক সভাপতি এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দিক রোজী, নওগাঁ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাবেক কাউন্সিলর এনামুল হক বাবুল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) বর্ডার উইংয়ের সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জুয়েল রানা, গুলশান থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহেন শাহ, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক শেখ জামাল, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত মঈন উদ্দিন আবদুল্লাহ, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপস, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহিদুজ্জামান সরকার, অভিনেত্রী শমী কায়সার , আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, রাঙ্গামাটি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী, তোফায়েল আহমদের ভাতিজা ও ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সোলাইমান সেলিম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসান, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাফিয়া খাতুনসহ অনেকে। এদের মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরী ও রিংকু জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন।
সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রপক্ষের কোনো প্রসিকিউটর, আওয়ামীপন্থী সিনিয়র আইনজীবীদের আদালতপাড়ায় দেখা যাইনি।
এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি মামলা থেকে খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলটির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসব মামলা মধ্যে দুর্নীতির মামলাও রয়েছে। আবার কেউ মামলা থেকে অব্যাহিত, কেউ বা খালাস পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন এছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবীর রিজভী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। অব্যাহতি পেয়েছেন জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হকসহ অনেকে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ভুয়া জন্মদিন পালন, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়াসহ মানহানির পৃথক পাঁচ মামলা থেকে খালাস দেন আদালত।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনের কিরুদ্ধে করা মামলা গত ২৪ অক্টোবর খারিজ করে দেন আদালত। তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকে গত ২৪ অক্টোবর ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা থেকে গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি পান। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি পান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে ১২ আসামি বিচারের মুখোমুখি হন। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অব্যাহতি পান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তবে চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
জিয়াউর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২২ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলা থেকে ২৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই দিন কর ফাঁকির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করা মামলা থেকেও খালাস পান তারেক রহমান। দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পান মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাজনৈতিক মামলা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রিজভীসহ অনেকে অব্যাহিত পান।
গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন শ্রম আদালত। তবে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ আসামিদের ১ মাসের জামিন দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছর দুদকের করা অর্থ আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিং মামলায় বিচারের মুখোমুখি হন ড. ইউনূস। তবে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ আগস্ট দুদক মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। এছাড়া, নানা ঘটনায় আদালতপাড়া ছিল সরগরম।
ঢাকা/মামুন/ইভা