‘সবাইকে এক পাল্লায় মাপলে আইনের শাসন ব্যাহত হবে’
আদালতে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন
সবাইকে এক পাল্লায় মাপলে যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে তা ব্যাহত হবে বলে আদালতকে বলেছেন ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় রউফ নামে এক যুবক নিহতের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর আল মাহমুদ শরীফ শফিউল ইসলামকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, এ আসামি ফ্যাসিস্টের সহযোগী। বিনা ভোটের এমপি। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত। প্রাথমিক অভিযোগে নাম আসায় তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম মিলি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, “শফিউল ইসলাম এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, সিআইপি। বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে প্রসিকিউশন একটা ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। মামলা যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ দেখুন, ঘটনা ১৮ জুলাইয়ের। মামলা ৮ জানুয়ারি। ঘটনার ৬ মাস পর মামলা। মামলা পরিকল্পিত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।”
তিনি বলেন, “মামলার ঘটনায় জড়িত থাকলে তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন, যাননি। কারণ তিনি কারো ক্ষতি করেননি। তার অপরাধ তিনি ১০ আসনের সাবেক এমপি। অসুস্থ, ব্ল্যাড ইনফেকশনে আক্রান্ত। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন।”
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন শফিউল ইসলাম। আমি কখনোই রাজনীতি করিনি। তিনি বলেন, “এই নির্বাচনের ৯ মাস আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলে আসি নির্বাচন করবো না। নির্বাচন বিভাজন, অনৈক্য সৃষ্টি করে। আমি ৬ বার বিজিএমইএ'র সভাপতি, একবার এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলাম। পলিসি মেকিং থেকে শুরু করে দেশের ইকোনিমিকসের উন্নয়নে কাজ করেছি। দুর্নীতির লাগাম না ধরতে পারায় সুফল আসেনি।”
প্রসিকিউটরের বিনা ভোটের এমপি এ বিষয়ে শফিউল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনে আমি, বিএনপির ক্যান্ডিডেটসহ ৬ জন ছিলাম। আমরা একটা ব্যতিক্রম নির্বাচন করার কথা বলেছি। ৬ ক্যান্ডিডেট নির্বাচন কমিশনে গিয়ে মিটিং করেছি। ৬টি স্থানে মিছিল মিটিং না করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি ১৬ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। কেউ একজন বলেছিলো সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেয়। আমি বলেছি না। যা পেয়েছি সেটাই হবে। নির্বাচনে কিন্তু সকল অংশ নিয়েছিলো, নির্বাচন করেছিলো। আমার নির্বাচনী এলাকা ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুরে কারো বাড়ি দখল করিনি, প্রতিবেশী কাউকে কষ্ট দেয়নি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কেউ আমার বিরুদ্ধে কিছু বলবে না।”
তিনি বলেন, “আদালতে আসার অভিজ্ঞতা নাই আমার। সবাইকে এক পাল্লায় মাপলে যে আইনের শাসনের কথা বলা হচ্ছে তা ব্যাহত হবে।”
পরে ওমর ফারুক বলেন, “এই শফিউল ইসলাম, সালমান এফ রহমান, আতিকুল ইসলাম, সালাম মুর্শেদীরা সিন্ডিকেট করে আওয়ামী লীগে বাইরে কাউকে ব্যবসা, নির্বাচন করতে দিতেন না। কি পরিমাণ সার্ভিস দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পুরস্কারস্বরূপ ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচনের সুযোগ পান। তিনি কিন্তু রাজনীতিবিদ না। তাহলে তিনি কেন নির্বাচন করবেন। নির্বাচন করবে তো রাজনীতিবিদরা।”
শফিউল ইসলামের আইনজীবী প্রতিউত্তর দিতে যান। তখন আদালত বলেন, “আপনারা তো বলেছেন। এরপর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।”
ঢাকা/মামুন/এসবি