ঢাকা     রোববার   ২৩ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১০ ১৪৩১

মাস পার হলেও জানা যায়নি উত্তরায় চীনা নাগরিক খুনের রহস্য

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২১ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ২০:৩৬, ২১ মার্চ ২০২৫
মাস পার হলেও জানা যায়নি উত্তরায় চীনা নাগরিক খুনের রহস্য

মাস পার হলেও জানা যায়নি রাজধানীর উত্তরায় চীনের নাগরিক ওয়াং বো (৩৭) হত্যার কারণ। অভিযুক্ত দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তারেও নেই কোনো উদ্যোগ। তবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চীনা নাগরিককে আনা-নেওয়ার দায়িত্বে থাকা মাইক্রোবাস চালক হৃদয় হোসেন ওরফে রুবেলকে। 

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসা থেকে ওয়াং বোর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথার পেছনেসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের আত্মীয় আরেক চীনা নাগরিক লিউ রুই ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ওই দিনই মামলা দায়ের করেন। এরপর আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।

মামলা দায়েরের পর ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় হৃদয় হোসেনকে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে হৃদয় কারাগারে রয়েছেন। 

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা-পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত চলছে। একজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা (দুইজন) হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা দেশের বাইরে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ভিকটিমের ব্যবসায়িক পার্টনার। তবে কোন দেশে গেছে জানা যায়নি। খুনের প্রকৃত কারণও জানা যায়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’’

এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার বাদী লিউ রুইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মামলা সম্পর্কে কথা বলতে রাজী হননি। 

শাহ আলম নামে এক বাংলাদেশীকে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান লিউ রুই। শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি তারা কয়েকজন একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে দুইজন চীনা নাগরিক এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কী কারণে খুন এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।’’

জানা গেছে ওয়াং বো ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছিলেন। এখানে ইট, বালি, পাথরের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ওয়াং বোর বাবা গত ১৬ জানুয়ারি মারা যান। এ কারণে তিনি চীনে যান। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফেরেন। ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে লিউ রুই ওয়াং বোকে দুপুরে খাবার জন্য ডাকতে যান। গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

এ দিকে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে ওয়াং বো বাসার গেইট থেকে একজনকে চীনা নাগরিককে রিসিভ করে রুমে নিয়ে যান। পরদিন ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়ান। ২ মিনিট পর অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাস থেকে আরেকজন অজ্ঞাতনামা চীনা নাগরিক নেমে এলে তিনি তাকে রিসিভ করেন। এর ঠিক ৩-৪ মিনিট পর অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি ১২টা ১১ মিনিটে ওয়াং বোর রুম থেকে ওই দুই চীনা নাগরিক দৌড়ে বের হয়ে আসেন এবং অপেক্ষারত মাইক্রোবাসে করে চলে যান। 

এ দিকে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকালে ওয়াং বোর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দ্বারা ১১টি আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়।

গ্রেপ্তারকৃত হৃদয়ের আইনজীবী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘সে গাড়ি চালক। তার কাজ এয়ারপোর্ট থেকে চীনা নাগরিকদের নিয়ে আসা এবং নিয়ে যাওয়া। সে ঘটনার বিষয়ে কিছু জানে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামিরা তার গাড়িতে করে এসেছিল। এটাই তার অপরাধ। তার বিরুদ্ধে কোনো ফুটেজ নাই। আশা করছি, মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হবে। হৃদয় ন্যায় বিচার পাবে।’’

ঢাকা/মামুন//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়